জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে আগ্রাসন পরিচালনাকারী এই দেশটি শনিবার (১ এপ্রিল) এই দায়িত্ব নেয়। যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
এদিকে রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউক্রেন। এমনকি এটিকে অযৌক্তিক এবং ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ বলেও অভিহিত করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রোববার (২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছে রাশিয়া। নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী এবং অস্থায়ী সদস্যসহ মোট ১৫টি সদস্য দেশ রয়েছে। রোটেশন ভিত্তিতে প্রত্যেক সদস্য দেশ এক মাস করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে থাকে। ১ তারিখ থেকে শুরু করে এপ্রিল মাসজুড়ে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব থাকবে রাশিয়ার কাছে।
রাশিয়া এর আগে এই পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে ছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আর ওই মাসেই ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা চালায় দেশটি। যদিও বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার এবং আন্তর্জাতিক আগ্রাসনের মতো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করাই জাতিসংঘের এই সংস্থাটির দায়িত্ব।
গত শুক্রবার রাশিয়ান গোলাবর্ষণে পাঁচ মাস বয়সী এক ছেলে শিশু নিহত হয়েছে জানিয়ে শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কাছে... স্পষ্টতই কিছু অযৌক্তিক এবং ধ্বংসাত্মক খবর আছে।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করছে। এটি এমন এক পদক্ষেপ যা কল্পনা করাও কঠিন এবং এই ধরনের প্রতিষ্ঠান যে সম্পূর্ণ দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে এই ঘটনা সেটিই প্রমাণ করে।’
রয়টার্স বলছে, নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী এবং অস্থায়ী সদস্যসহ মোট ১৫টি সদস্য দেশ রয়েছে। রোটেশন ভিত্তিতে প্রত্যেক সদস্য দেশ এক মাস করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে থাকে। যদিও এটি মূলত পদ্ধতিগত দায়িত্ব, তারপরও ক্রেমলিন ও অন্য রুশ কর্মকর্তারা সভাপতির দায়িত্ব পালনের সময় ‘সকল অধিকার প্রয়োগ’ করার অঙ্গীকার করেছেন।
এছাড়া ইউক্রেনের আপত্তি সত্ত্বেও রাশিয়াকে সভাপতির দায়িত্ব নেওয়া থেকে আটকাতে পারেনি নিরাপত্তা কাউন্সিলের আরেক স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জানিয়েছে, রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ায় দেশটিকে এই দায়িত্ব নেওয়া রুদ্ধ করার কোনও উপায় ছিল না।
আর তাই দায়িত্ব পালনের সময় রাশিয়াকে ‘পেশাদার ভাবে আচরণ করার’ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে গত মার্চ মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পুতিনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি বেআইনিভাবে ইউক্রেনের শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন।
আদালত বলছে, এই অপরাধ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটে চলেছে। একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও।
মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে বিচারের জন্য হাজির করা।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার সভাপতিত্বকে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখে চপেটাঘাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে জেলেনস্কি বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদসহ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবর্তনের সময় এসেছে।
তিনি বলেন, ‘একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং অন্য যে কোনও রাষ্ট্র যে কিনা সন্ত্রাসী হতে চায়, তাদেরকে শান্তি বিনষ্ট করা থেকে বিরত রাখতে অবশ্যই সংস্কার প্রয়োজন।’