বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে এ সংক্রান্ত আলাদা প্রশ্ন উত্থাপন করেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান ও হাবিবুর রহমান এবং জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হেসেন বাবলা ও গণফোরামের মোকাব্বির খান।
আলাদা প্রশ্নে তারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ ও এ বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির বাধাগুলো দূর করতে এলসি খোলায় ন্যূনতম মার্জিন রাখার বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, মশলার বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও মশলা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। সভায় খুচরা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি রোধ করে পাইকারি পর্যায়ে পাকা রশিদ ব্যতীত পণ্য বিক্রি না করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য (দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি) বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত বাজার মনিটরিং টিম প্রতিদিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার পরিদর্শন করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকাসহ সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত রাজার মনিটরিং করছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে গত ৩১ মে পর্যন্ত ১১ হাজার ২৯টি বাজার মনিটরিং করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা বাজারগুলোতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে টিপু মুনশি জানান, দেশে চিনি ও পেঁয়াজের বর্তমান বার্ষিক চাহিদা যথাক্রমে ২০-২২ লাখ মেট্রিক টন ও ২৫-২৭ লাখ মেট্রিক টন। চিনি ও পেঁয়াজের উৎপাদন প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন ও ২৮ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন। চিনির দেশীয় উৎপাদন অতি নগণ্য হওয়ায় চাহিদার প্রায় ৯৯ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।
চিনির মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্য গত তিন মাসে প্রতি মেট্রিক টনে প্রায় ১৬০ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানির ব্যয় নির্ধারণে ব্যবহৃত বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের মূল্য এক বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরিশোধিত চিনি পরিশোধনে ব্যবহৃত কেমিক্যালের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণেও স্থানীয় বাজারে চিনির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।