পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশটিতে নতুন সরকার গঠিত হয়নি। তার প্রধান কারণ কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।
তবে শুরু থেকেই জোট সরকার গঠনে তোড়জোর করে আসছে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এন এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পিপিপি। এ নিয়ে তারা পাঁচ পাঁচবার বৈঠক করেছে; কিন্তু সরকার গঠনে সম্মত হতে পারেনি।
পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, সরকার গঠন নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তা শিগগিরই কেটে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশটিতে সরকার গঠন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের বরাতে ডন জানিয়েছে, পিপিপির অনীহার কারণে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত হতে পারে। সরকারে যোগ দিতে নিজ দলের ভেতর থেকেসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে পিপিপি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে।
সূত্র ডনকে জানায়, নতুন সরকার গঠনে সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে পিএমএল-এনের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি ও কেন্দ্রীয় সরকারে কিছু মন্ত্রণালয় পাওয়ার প্রতি সমর্থন দিচ্ছেন পিপিপির কিছু নেতা।
অবশ্য পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে পিএমএল-এনের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়ের বিরোধিতা করতে বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার গঠন করতে প্রয়োজনীয় সমর্থন দিতে কেবল পিপিপি রাজি হয়েছে।
এক দিন আগে পিপিপির প্রধান ক্ষমতা ভাগাভাগির ধারণা খারিজ করে বলেছেন, তিনি এ ধরনের চুক্তি করতে আগ্রহী নন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন ধরনের প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না।’
পিপিপির নেতা কামার জামান কায়রা একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসতে এখনো ৮ থেকে ৯ দিন বাকি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হবে ২ বা ৩ মার্চ। সুতরাং যুক্তসংগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এখনো দুই পক্ষের কাছে যথেষ্ট সময় রয়েছে।
কায়রা বলেন, পিপিপি কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেবে, কোনো বৈঠকেই এমন কোনো আলোচ্যসূচি ছিল না। পিপিপি এখনো এ সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয়ের জন্য তারা পিএমএল-এনকে বলবে না।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মোট আসন সংখ্যা ২৬৬টি, তার মধ্যে নির্বাচন হয়েছে ২৬৫টি আসনে। কোনো দল যদি সরকার গঠন করতে চায়, তাহলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অন্তত ১৩৩টি আসনে সেই দল বা জোটকে জয়ী হতে হবে।
কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে কারাবন্দী নেতা ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। দলটির প্রার্থীরা ৯২টি আসন পেয়েছে। পিটিআইয়ের পর এই তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে পিএমএল-এন, তারা ৭৫টি আসন পেয়েছে। আর পিপিপি পেয়েছে ৫৪টি আসন।
এছাড়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ১৭টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম- ফজলুর (জেইউআইএফ) ৪টি এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা পেয়েছেন ৯টি আসন।
অর্থাৎ কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আসন পায়নি। এই পরিস্থিতিতে জোট সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয় পিএমএল-এন এবং পিপিপির মধ্যে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাবেক ক্ষমতাসীন দল দুটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারেনি।