কয়েক দফা বাড়ার পর এবার কমেছে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা। পাশাপাশি এসব হিসাবে টাকা রাখার পরিমাণও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ১৮টি। এসব হিসাবে আমানত কমেছে ১ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা কমছে। এর প্রভাব পড়ছে ধনী-গরিব সব শ্রেণির আমানতকারীদের ওপর।
তথ্য বলছে, চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাব রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ওপরে এসব ব্যাংক হিসাবে মোট জমা আছে ৭ লাখ ৪০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮, মোট জমা ছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ।
চলতি বছর মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৭১ হাজার ২০২। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানত জমা ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।
তবে কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি নাগরিকদের হিসাব নয়। কেননা, অনেক ব্যক্তি যেমন ব্যাংকে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখেন, তেমনি অনেক প্রতিষ্ঠানও তা করে। অর্থাৎ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বলতে যুগপৎ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের কথাই বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তারও কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৬২৩। যেখানে জমা ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৪৪৬টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৮ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৯২ হাজার ৫১৬। যেখানে জমা ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৬৫২টি হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজার ৩৯৬, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৯৬১, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ২১১ ও ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৮৭৫টি আমানত হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার ৫০১, ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির টাকার ৩৬৯ ও ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৬৮১। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৮২৬। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮২, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ২ হাজার ২, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৩৪৫, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকার ছিল ৯১২ আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২, ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির ছিল ৪৮০ ও ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ছিল ৭৩৮। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮১২।
দেশে প্রকৃত কোটিপতির সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। ফলে কত মানুষের কোটি টাকা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা করোনা মহামারীর পর থেকে দ্রুত বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল মাত্র ৪৭টি, যা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৫১৬। করোনা মহামারীর শুরুতে ২০২০ সালের মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫। এরপর থেকেই কয়েক দফা বাড়ার পর বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজারে ৮৯০-তে এসে দাঁড়িয়েছে।