দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিশ্চিতে বেসরকারি খাত এবং ব্যাংকিং সেক্টর একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক হচ্ছে ব্যবসা সহযোগী। দেশের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে ব্যাংকিং সেক্টরের ভূমিকা অপরিসীম। ব্যাংকিং সুযোগ-সবিধাসমুহ যত সহজলভ্য ও বাধাহীনভাবে এবং দ্রুততরভাবে নিশ্চিত করা যাবে ততই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বুধবার (০৫ জুন) বিকেলে এফবিসিসিআই’র গুলশান কার্যালয়ে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যাংকিং খাত বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি বিস্ময়কর। তবে কোভিডের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বিদ্যমান বিশ্ব অর্থনীতির সংকটময় পরিস্থিতিতেও মাথাপিছু আয়সহ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে আমরা অগ্রগতি অর্জন করেছি। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে সরকার, বেসরকারি খাত ও ব্যাংকিং সেক্টরের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের পুঁজি যোগান থেকে শুরু করে চলতি মুলধন ও অন্যান্য সব অর্থায়ন হয়ে থাকে ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম যথাযথভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য এফবিসিসিআই’র সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নিবিড় যোগাযোগ থাকা জরুরী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কেননা চলমান তীব্র প্রতিদ্বন্দিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এলডিসি গ্রাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে টেকসই উত্তরণ ও এসডিজি অর্জনে ব্যাংকিং খাতের সক্রিয় সহযোগিতা সর্বাত্মকভাবে প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় এফবিসিসিআই সভাপতি দেশের বিরাজমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং সংকট মোকাবেলায় কতিপয় সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে বর্তমান গ্রাহক ঋণসীমা ১৫% হতে বৃদ্ধি করে ২৫% এর ব্যবস্থাকরণ, উৎপাদনকারীগণকে সুরক্ষার লক্ষ্যে স্বল্প মেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণে রূপান্তরকরণ, ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং নিয়মিতভাবে যাতে এলসি খোলা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, সুদের হার বৃদ্ধি না করা, মেয়াদোত্তীর্ণ মেয়াদী ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ৬ (ছয়) মাস গ্রেস পিরিয়ড প্রদান করা, ডলার সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ব্যাংকের চার্জ ও কমিশন যৌক্তিকীকরণ, দূর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকে এক্সিট প্রদানের সুপারিশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পখাত ও মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা সম্প্রসারণে সকল ব্যাংকের শাখাসমূহে এসএমইদের সহায়তায় হেল্প ডেস্ক কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা, এসএমই ও মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ও জামানতহীন ঋণের সুযোগ দেয়া, দ্রুত এবং কার্যকর ঋণ বিতরণের জন্য ডকুমেন্টেশন সহজ করা, যেসব এসএমইদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই সংশ্লিষ্ট ট্রেডবডির সুপারিশ অনুযায়ী তাদের ঋণ দেয়ার মাধ্যমে অথবা অন্য কোন উপায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের আওতায় আনা, ব্যবসা খরচ কমিয়ে আনার স্বার্থে গত ৮ মে, ২০২৪ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত সুদ হারের অতিরিক্ত কোন সার্ভিস চার্জ আরোপ/আদায় না করার নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা ও সুপারভিশন চার্জ আদায় না হয় তা নিশ্চিত করা, এক্সপোর্ট বিল পরিশোধের সুপারিশের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ব্যবসা-বান্ধব সহযোগিতার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। এসময় খেলাপী ঋণ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বিশাল অন্তরায় উল্লেখ করে অনাদায়ী/খেলাপী ঋণের পরিমান কমিয়ে আনার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
সভায় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ডলার বেচা-কেনা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এক থেকে দুই মাসের মধ্যে অবস্থা আরও স্বস্তিদায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সুদ হার ১৪ শতাংশের মধ্যে রাখতে ব্যাংকগুলো সবার্ত্মক চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।