হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন আর কয়েকদিন পরই। এখন চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। ধারণা করা হচ্ছে দেশের এভিয়েশন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে তৃতীয় এই টার্মিনাল। আগামী ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টার্মিনাল ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান।
আজ সোমবার (২ অক্টোবর) থার্ড টার্মিনালের কাজের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়সহ সবার সহযোগিতায় করোনাভাইরাসের মহামারির সময়েও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলমান রাখতে পেরেছিলাম। আমাদের শ্রমিকদের মনোবল অনেক কঠোর ছিল। করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট আসা বন্ধ হয়ে গেয়েছিল। গুণগত মান বজায় রেখে সেসব ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এগুলো আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। তারপরও আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে গেছি। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছি।
মফিদুর রহমান আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে আংশিক উদ্বোধনে যাওয়া। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের ৮৯ বা প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আপনারা জানেন বিগত কয়েকদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। আমাদের কিছু করার ছিল না। তারপরও আমাদের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছে যে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে গেছি। আগামী ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় টার্মিনালের শুভ উদ্বোধন করবেন।
উল্লেখ্য,বেবিচকের মতে, নতুন টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ক্যান্টিনা, ডিউটি ফ্রি শপ ও বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে দুটি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে এবং এটি উড্ডয়ন বা অবতরণের জন্য অন্যান্য উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে পারে।
নতুন টার্মিনালে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য একটি বড় লাউঞ্জ বছরে ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেবে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে দুটি পুরানো টার্মিনালের সাথে নতুন টার্মিনালকে সংযুক্ত করার জন্য একটি করিডোর নির্মাণ করা হবে।
অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য কাস্টমসের জন্য একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল থাকবে।
টার্মিনালটিতে ৩৬৫০-বর্গ-মিটার এলাকা থাকবে ভিআইপি যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য।
শাহজালাল বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল বর্তমানে ৩০টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন প্রায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ যাত্রীকে পরিষেবা দেয়।
বর্তমানে যাত্রীদের বিমানবন্দরে ম্যানুয়াল সিকিউরিটি চেক করা হয়। এটি ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা চেকের মাধ্যমে পরিবর্তন করা হবে, যাত্রীরা বিমানে না ওঠা পর্যন্ত স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে।
বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৃতীয় টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ও ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে।
মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ভূগর্ভস্থ টানেল ও ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে যাতায়াতের সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডেরুম, মুভি লাউঞ্জ, শিশুদের জন্য প্লে-জোন এবং ফুড কোর্ট যাত্রীদের চাহিদা ও স্বাচ্ছন্দ্য পূরণ করবে।
প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে।
তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ পেতে যাচ্ছে জাপান।
নির্মাণ কাজ করছে জাপানের মিৎসুবিশি, ফুজিটা ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।