ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ‘ব্রিকস’ একটি নতুন উদ্ভাবনী মুদ্রা প্রবর্তনের পরিকল্পনা করছে। আগামী আগস্ট থেকে তারা ডলারের বিকল্প হিসাবে নতুন মুদ্রা চালু করতে কাজ করছে। পরবর্তী ধাপে তারা কাজ করবে ডিজিটাল বা মৌলিক কোনো নতুন মুদ্রার প্রচলন নিয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকসের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে নতুন এ প্রস্তাবনা থুলে ধরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ব্রিকস হল পাঁচটি অগ্রণী উদীয়মান অর্থনীতির সংক্ষিপ্ত রূপ—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। রাশিয়ার পার্লামেন্টের ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেকজান্ডার বাবাকভ দাবি করেছেন যে, পরিকল্পনাটি প্রাথমিকভাবে লেনদেনে দেশীয় মুদ্রা ব্যবহার করা থেকে একটি ডিজিটাল বা ‘অদূর ভবিষ্যতে একটি যুগান্তকারী মুদ্রার বিকল্প রূপ’ প্রবর্তন এবং প্রচারে রূপান্তরিত হবে।
আসিয়ান এবং ব্রিকস দেশগুলো ইতোমধ্যে তাদের নিজ নিজ জাতীয় মুদ্রায় লেনদেন শুরু করেছে। তবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো যাতে চীনা ইউয়ানকে একটি অন্যতম নিষ্পত্তির মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে তার প্রভাবক হিসেবে রাশিয়া, ব্রাজিল এবং ভারত ইউয়ানে লেনদেন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্রিকস একটি একীভূত মুদ্রা উদ্ভাবনের জন্য স্বর্ণভিত্তিক মুদ্রা চালু করতে চাইছে। তবে সেক্ষেত্রে একটি জিনিস অনুমোদন দিতে হবে- আর সেটি হলো যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিষ্পত্তিকারক মুদ্রা না পাওয়া যায় তবে বারটার (বিনিময়) পদ্ধতিতে লেনদেন চালু রাখতে হবে। রাশিয়া যদিও আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদানের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু ইউরোপ সেটা না নাকচ করে দিয়েছে।
ব্রিকস দেশগুলো ২০১৭ সাল থেকে ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে কাজ করা শুরু করলেও তা গতি পেয়েছে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে। রাশিয়া এবং ভারত সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি) নিয়ে কাজ শুরু করেছে যার পথ পরিক্রমায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যে ‘প্রজেক্ট এমব্রিজ’ নামে ক্রস বর্ডার সিবিডিসি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যাতে চীন, হংকং এবং থাইল্যান্ড এবং ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট (বিআইএস) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, সুইডেন এবং ইসরাইলের অন্য ৬টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করছে।
বর্তমানে আরও অনেকগুলো দেশ ব্রিকস জোটে যোগ দিতে এবং নতুন মুদ্রা গ্রহণ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত এই জোটে আরও দেশ যোগ দিতে পারে। এ বছরই জোটটি প্রসারিত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আরও দেশের জোটে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি আগামী আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনে নেওয়া হতে পারে।
ব্লুমবার্গের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক ডজনেরও বেশি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে।
সম্প্রসারণের পরে জোট আরও শক্তিশালী হবে, কারণ তাদের জিডিপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির চেয়ে এগিয়ে থাকবে। এটি ডলার ও ইউরোকে পেছনের দিকে রাখতে পারে, কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলো মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা শেষ করতে পারে। সুতরাং এটা বলা যায়, ব্রিকস আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে একটি নতুন বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার সূচনা করার জন্য অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২৫টি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য নতুন মুদ্রা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। যে দেশগুলো ব্রিকস জোটে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে তারা হলো আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেলারুশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সেনেগাল, সুদান, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা পাঁচটি দেশ নিয়ে ব্রিকস। সুতরাং, মোট ৩০টি দেশ এখন মার্কিন ডলারকে এর বৈশ্বিক রিজার্ভ অবস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করছে।
যদি এতগুলো দেশ ডলার ত্যাগ করে এবং একটি নতুন মুদ্রা দিয়ে আন্তঃসীমান্ত লেনদেন শুরু করে, তবে তা মার্কিন ডালারের ওপর বড় আঘাত করবে। ডলার বিশ্বব্যাপী দুর্বল হতে পারে এবং এর ঘাটতি পুনরুদ্ধার করার কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। শিগগিরই প্রকাশিত হওয়া ব্রিকস মুদ্রা আন্তর্জাতিকভাবে ডলারের আধিপত্য দূর করার ক্ষমতা রাখতে পারে।