প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রচেষ্টা ছিল দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আবার বিরোধী দলে থেকেও দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তারও পরিকল্পনা করেছি। তবে ২০০৯ থেকে টানা ক্ষমতায় আছি বলেই, দেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান করতে পেরেছি। স্থায়ী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।
আজ বুধবার (২৬ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এর ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্কুলজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, কলেজে ওঠার পর ভাইস প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হয়েছিলাম। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রতিটি আন্দোলন এবং সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। তবে এত বড় গুরুদায়িত্ব নিতে হবে, সেটা কখনও চিন্তাতেও আসেনি। আর সে ধরনের কোনো আকাঙ্ক্ষাও ছিল না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাবা (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতি করতেন, মা তার পাশে সব সময় ছিলেন আর আমরাও সেভাবে কাজ করে গেছি।
তিনি বলেন,দীর্ঘ পরবাস জীবন পার করে ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসি, তখন দেশ ঘুরে যে দুরাবস্থা দেখেছিলাম; সেটা সহ্য করার মতো ছিল না। প্রতিবছর দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত, মানুষের গায়ে কাপড় ছিল না, বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে পরানো হতো। একবেলা খাবার জুটত না তাদের। আর রোগের চিকিৎসা ও শিক্ষা সে তো ছিল সুদূর পরাহত। এদেশটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, এই সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়া এটাই ছিল তার (বঙ্গবন্ধু) একমাত্র লক্ষ্য। মানুষ যখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ঠিক তখনই আসে ১৫ আগস্টের আঘাত। ছোট্ট শেখ রাসেলের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার। তাকেও হত্যা করা হয়। কখনও চিন্তাতেও আসেনি আওয়ামী লীগের সভাপতির মতো গুরু-দায়িত্ব নেয়ার। তবে নিতে হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের প্রতীক আমাদের শসস্ত্র বাহিনী, তিনি সেই বাহিনীও গড়ে তুলেছিলেন। বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর সহায়তায় দেশকে যেমন গড়ে তুলেছিলেন তিনি, সেই সাথে শসস্ত্র বাহিনীকেও গড়ে তুলেছিলেন। একটি দেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে, তারা যেন সুপ্রশিক্ষিত ও উপযুক্ত হয় সে পদক্ষেপটাও তিনি নিয়েছিলেন। আমরা তারই পদাঙ্ক অনুসারণ করে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে এবং সেভাবে কাজ করছে সরকার।
তিনি আরও বলেন,যে কোনোভাবে দেশকে রক্ষা করা, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে করতে যাবো না, কিন্তু আক্রান্ত হলে যেন নিজেদের স্বধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি, সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সেভাবেই লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারে আসার পর প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে আমরা গড়ে তুলছি সেভাবেই। যাতে সশস্ত্র বাহিনী উৎকর্ষতা অর্জন করতে পারে, সেভাবে কাজ করছি।
আমাদের দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ করুণা করে না, সবাই মর্যাদা দেয়। আমরা দেশে-বিদেশে যে মর্যাদা পেয়েছি, তা ধরে রাখতে হবে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার জীবন যে কোনো সময়ই চলে যেতে পারে। কিন্তু আমি পিছিয়ে যাইনি। সকল বাধা অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছি।
দেশে খাদ্যদ্রব্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তবে যতক্ষণ আমার নিঃশ্বাস আছে, লক্ষ্য একটাই মানুষের জীবন উন্নত করা।
এসএসএফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তাদের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে থাকে। যারা আমার নিরাপত্তায় থাকে, তাদের জন্য চিন্তিত থাকি আমি নিজেও। কারণ আমার ওপর বারবার আঘাত এসেছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে আমাকে রক্ষা করেছেন। আমি দোয়া করি, যারা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আল্লাহ সবাইকে যেন সুরক্ষিত রাখেন।
তিনি বলেন, আমরা রাজনীতি করি, জনগণই আমার শক্তি। কাজেই এসএসএফের নিরাপত্তার কড়াকড়িতে যেন আবার জনগণ থেকে নিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই। কারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আর গুলি করা লাগবে না, এমনিতেই শেষ হয়ে যাবো। আমি জানি, এ কাজটা খুবই কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমার প্রচেষ্টা ছিল দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আবার বিরোধী দলে থেকেও দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তারও পরিকল্পনা করেছি। তবে ২০০৯ থেকে টানা ক্ষমতায় আছি বলেই, দেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান করতে পেরেছি। স্থায়ী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজকে যে পরিবর্তন হয়েছে, সে ধারা অব্যাহত রেখেই দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।