এপ্রিল ১৯, ২০২৪

‘ছেলে-মেয়েরা বের করে দিছে। পরের বাড়ি থাকি’, বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের কামাটোলা বাবুপুর গ্রামের দাহারুল ইসলাম (৯০) ও তার স্ত্রী শেরিনা বেগম (৮৫)।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা জানান, তাদের সাত ছেলে ও মেয়ে। সবাই প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে দুইজন শিক্ষক ও একজন ব্যবসায়ী।

বলেন, ‘সবাই আমাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এখন আশ্রয় নিয়েছি পরের বাড়ি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেরিনা বেগম জানান, তার বড় ছেলে রায়নুল হক ঢাকায় ব্র্যাকে চাকরি করেন। মেজো ছেলে বাগির আলম ভারতের বাসিন্দা। সেজো ছেলে ইমরান আলি শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক। ছোট ছেলে সাইদুর রহমান শিবগঞ্জের বড় ব্যবসায়ী।

মেয়েদের মধ্যে মেজো মেয়ে পারচৌকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, আরেক মেয়ের স্বামী তারাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তৃতীয় মেয়ের স্বামী মারা যাওয়ায় পর থেকে সে অসহায়।

বৃদ্ধা বলেন, আমাদের ১৩ বিঘা জমি ও ৪০ লাখ টাকা ছিলো। সব সম্পত্তি ছেলে-মেয়েরা হাতিয়ে নিয়েছে। আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দুটোও তারা রেখে দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, এলাকার কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবারগুলোর মধ্যে তারা ছিলো একটি। ভাই-বোন অনেক হওয়ায় পিতামাতার দায়িত্ব কেউ নিতে চায়না। সন্তানরা সবাই প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টার কারণেই ঘরছাড়া হন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। বর্তমানে তারা থাকেন এক প্রতিবেশীর আশ্রয়ে।

শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান আলী পিতা-মাতার এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বাবা-মা সব সম্পত্তি অন্য ছেলেমেয়েদের ভাগ করে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি শুধু বাগান বিক্রির ৮৫ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। চার বছর ধরে তিনি তার বাবা-মায়ের দেখাশোনা করলেও অন্য কোনো ভাই-বোন খোঁজ নেয়নি।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি পারিবারিক ঝামেলার কারণে তিনি তার ভাই-বোনদের কিছু দিনের জন্য বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানালেও কেউ তাদের দায়িত্ব নেয়নি। এমতাবস্থায় ভাই-বোনদের নিজের বাড়িতে আসতে বারণ করায় তার বাবা-মা অভিমান করে ঘরে ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন।

অপর ছেলে রায়নুল ও সাইদুর রহমানকে এ বিষয়ে ফোন করা হলে তারা ব্যক্তিগত বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত এ বিষয়ে বলেন, ওই বৃদ্ধ দম্পতির সন্তানদের উচিত ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিকতা মানার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সেবা করা। আমার কাছে ভুক্তভোগীরা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *