সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সবার জন্যই ৩৫ বছর করা হচ্ছে। নারী ও পুরুষের একই বয়সসীমা নির্ধারণ করে ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যানশিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অনুমোদনের জন্য আগামী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটির খসড়া উপস্থাপন করা হতে পারে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আজ বুধবার সদ্য নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশিদ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়াটি উপস্থাপন করা হতে পারে। খবর কালের কণ্ঠের।
প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সুপারিশ দিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি বিভিন্ন দেশের চাকরির বয়সসীমা এবং আন্তর্জাতিক মান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পাশাপাশি চাকরিতে নিয়োগে অনিয়মের কারণগুলোও সংগ্রহ করা হয়। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা পুরুষের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ এবং নারীর জন্য ৩০ থেকে ৩৭ বছরে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ ও বিভিন্ন বিধিমালা রয়েছে। প্রত্যেক সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষে সরাসরি নিয়োগের জন্য আলাদা বিধিমালা/প্রবিধানমালা আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্বশাসিত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক আইন, সংবিধি ও বিধিবিধান রয়েছে। তাই সর্বজনীন বিধান করার উদ্দেশ্যে ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যানশিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোতে চাকরির যেসব পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর উল্লেখ রয়েছে, সেখানে ৩০-এর পরিবর্তে ৩৫ বছর করতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’ শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ এবং নারীর ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন।
আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘মেয়েদের জন্য আলাদা করে বেশি বয়স দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা এই কারণে দিয়েছি যে ছেলেদের মতো ওই বয়সে মেয়েদের পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফ্যামিলি অববিগেশনস থাকে, বিয়ে হয়ে যায়, বাচ্চাকাচ্চা হয়। তাই তারা যেন আসতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোটা আছে, কিন্তু অতটা ফুলফিল হয় না এখনো। সে জন্য আমরা এ সুপারিশ দিয়েছি, যেন নারীরা এ সুবিধাটা পান, তারা আসতে পারেন।’
মুয়ীদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘৩৫ বছর (চাকরিতে প্রবেশে) সবার জন্য প্রযোজ্য হবে, তবে নারীর জন্য আমরা দুই বছর বাড়িয়ে সুপারিশ করেছি। এটা করেছি কারণ আরও বেশি সংখ্যক নারী যেন চাকরিবাকরিতে আসতে পারেন।’
কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলেছি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও দেখেছি। বিভিন্ন দেশে যে বয়সসীমা আছে সেটার সঙ্গে আমাদের সুপারিশ সংগতিপূর্ণ হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে আলাদা কিছু নয়। আমি শুনেছি, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে, এ বিষয়ে উনারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এমন সুবিধা আছে, সেজন্য আমরা এটা করেছি। আমরা নতুন কিছু আবিষ্কার করিনি।’
সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বিষয়ে কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যাদের বিষয়ে সুপারিশ করলাম, তারা চাকরি করে অবসরে আসতে অনেক সময়। এর মধ্যে অনেক কিছু চিন্তা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’