জাপানের নোবেলজয়ী সাহিত্যিক কেনজাবুরো ওয়ি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। গত ৩ মার্চ ৮৮ বছর বয়সে রাজধানী টোকিওতে তিনি মারা বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন তার প্রকাশক কোদানশা। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
সাহিত্য শাখায় জাপানরেক দ্বিতীয় বারের মতো নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছিলেন কেনজাবুরো ওয়ি; তবে পুরস্কার পেলেও বিশেষ কারণে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
মনেপ্রাণে অহিংসা ও শান্তিবাদী কেনজাবুরো ওয়ি কবিতা-গল্প-উপন্যাস লেখার পাশাপাশি নিয়মিত পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালিয়েছেন। এমনকি জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যখন দেশটির শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তখন দৃঢ় ভাষায় তার প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন তিনি।
জাপানের মূল দ্বীপগুলোর মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে ছোট শিকোকুতে ১৯৩১ সালে জন্ম নেন ওয়ি। সাত ভাইবোনোর মধ্যে তৃতীয় ছিলেন তিনি।। ১৯৪৪ সালে পিতার মৃত্যুর পর মায়ের অভিভাকত্বে বড় হন তিনি।
শৈশবেই ওয়ির মধ্যে সাহিত্য সম্পর্কে আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছিলেন তার মা। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ওয়ি জানিয়েছেন, ‘হাকলবেরি ফিন’ এবং এ রকাম ইংরেজি ও ইউরোপীয় সাহিত্যের অনেক ক্ল্যাসিক রচনা শৈশবে তাকে কিনে দিতেন তার মা।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি সাহ্যিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করা কেনজাবুরো ওয়ির লেখালেখির শুরু ছাত্রাবস্থাতেই। ১৯৫৮ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় জাপানের বিখ্যাত আকুয়াতাগা সাহিত্য পুরস্কার পান, তারপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৬০ সালে জাপানের চিত্রপরিচালক জুজো ইতামির বোন ইউকারি ইতামিকে বিয়ে করেন ওয়ি। এই দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন হিকারি, যিনি দীর্ঘদিন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন।
ওয়ির পুরো সাহিত্যজীবনে দু’টো বিষয় গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ে জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলা এবং তার ছেলে হিকারি। অনেক বয়স হওয়ার পরও মানুষজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগে জড়তা কাজ করত হিকারির মধ্যে। তবে ছোটো থেকেই সঙ্গীতে আগ্রহ ছিল তার এবং বর্তমানে হিকারি জাপানের একজন সফল সুরকার।
ছোটোবেলায় হিকারি যখন এই সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন, সে সময় পিতা হিসবে সহানুভূতির সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন কেনজাবুরো ওয়ি। বিভিন্ন সক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তার অনেক গল্প-উপন্যাস আসলে হিকারির কণ্ঠস্বর। পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ধ্বংসযজ্ঞও বারবার উঠে এসেছে তার সাহিত্যে।
নিজের লেখা উপন্যাস ‘একটি ব্যাক্তিগত ব্যাপার’র (এ পারসোনাল ম্যাটার) সুবাদে ২০১৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন ওয়ি। কিন্তু জাপানের রীতি অনুযায়ী দেশটির সম্রাটের কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করতে হতো বলে তা বর্জন করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে পরে এক সাক্ষাৎকারে ওয়ি বলেছিলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি— গণতন্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী ও মর্যাদাসম্পন্ন কোনো শক্তির অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে নেই।’