প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাংকে টাকা নেই বলে দেশে যে গুজব সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কান দেবেন না। বৈশ্বিক মন্দায় এখনো আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো আছে এবং ব্যাংকেও পর্যাপ্ত টাকা আছে।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজবে কান দেবেন না। এসব গুজব সৃষ্টি করে একটি পক্ষ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। কারণ মিথ্যা কথায় তারা পারদর্শী। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেটি কাজে লাগিয়ে এটা করছে তারা।
এ সময় তিনি সোমবারও অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে এখনো আমরা ভালো আছি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই ক্ষমতায় এসেছে তার সরকার দেশ গড়তে স্বাক্ষরতার হার বাড়াতে ছাত্রদের হাতে বই তুলে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের সময়ে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশনজট। সারাদেশে প্রতি রাতে কারফিউ। এরশাদও জিয়ারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তার পেটুয়া বাহিনী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অফিসে ছাত্রদলের সন্ত্রাসী বাহিনী গিয়ে ভিসিকে চেয়ার থেকে সরিয়ে দিয়ে রাতের অন্ধকারে তাদের মতাদর্শের একজনকে বসিয়ে দিলো। শামসুন্নাহার হলে পুলিশ আর ছাত্রদল দিয়ে অত্যাচার চালিয়েছিলো এই খালেদা জিয়া।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলো। আমি তুলে দিয়েছিলাম বই খাতা। ছাত্ররা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই আমি ছাত্রদের হাতে বই খাতা তুলে দিয়ে বলেছিলাম, সবার মাঝে সাক্ষরতার আলো ছড়িয়ে দিতে। তারা নিজের গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলো। বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা।
আজকে বাংলাদেশের মানুষের যত অর্জন সেটি আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় এসে মার্শাল ’ল দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলো জিয়াউর রহমান। অর্থাৎ স্বাধীনতার চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাস করতো না। জংয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ, জাতির পিতার নাম নিষিদ্ধ, অর্থাৎ স্বাধীনতার ইতিহাসই কয়েকটা প্রজন্ম জানতেই পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছে।
আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যের কাছে হাত পেতে বাংলাদেশকে চলতে হতো। এই হচ্ছে বিএনপি জামায়াতের অর্জন। বাংলাদেশ আজকে আর সেই দুর্দশাগ্রস্ত বাংলাদেশ নেই। একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আর্থসামাজিক উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়। উদ্দেশ্য ছিলো লাখো শহীদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছে... মার্শাল ল জারি করে প্রতি রাতে কারফিউ...সেটি কি কারফিউ গণতন্ত্র? বিএনপি নেতাদের এটা জিজ্ঞেসা করা উচিত। খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া এরা কারা? একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের নেতাকর্মী হত্যাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চালানকারী, মানিলন্ডারিংকারী। তারেক জিয়া, কোকো যে মানিলন্ডারিং করেছে এটা আমেরিকার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
বিএনপির শাসনামলে দেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দেশকে এমন অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলো যেখান থেকে ইমার্জেন্সি হয়।
জনগণ আওয়ামী লীগকে স্বত:স্ফূর্তভাবে ভোট দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জিতবে কিভাবে? এক সিটে যদি ৩ জন নমিনেশন দেয় তাহলে জিতবে কিভাবে? রিজভী একজনকে দেয়, ফখরুল একজনকে দেয়, লন্ডন থেকে তারেক একজনকে দেয়। টাকা যেখানে বেশি সেখানে মনোনয়ন দেয়। এভাবে নির্বাচন করে জেতা যায় না। সকালে একজনকে তো বিকালে আরেকজনকে, এভাবে তাদের ইলেকশন। যে দলের এই অবস্থা তারা গণতন্ত্র উদ্ধার করবে!
তিনি বলেন, যাদের জন্মই হিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে। কিছু রাজনীতি শিখেছে আমাদের সাথে এরশাদ বিরোধী যৌথ আন্দোলন করতে গিয়ে। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটে এসেছে। ভিন্ন পথে কখনো ক্ষমতায় আসেনি, আসবেও না।
এ সময় করোনাকালীন মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলনস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। সাদা পায়রা উড়িয়ে তিনি সম্মেলন উদ্বোধন করেন।