খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিএনপি বেগম জিয়াকে ‘গিনিপিগ ও রাজনীতির দাবার গুটি’ বানিয়েছে।
আজ সোমবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মায়ের কান্না আয়োজিত মানববন্ধনে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
দেশে বেগম জিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসা যেন নিশ্চিত হয়; সেজন্য যা কিছু প্রয়োজন সেটি সরকার করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আপনারা (বিএনপি) রাজনীতি করবেন সেটা তো করতে দেওয়া যায় না। বেগম জিয়াকে বিএনপি গিনিপিগ বানিয়েছে, রাজনীতির দাবার গুটি বানিয়েছে। খালেদা জিয়াকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, আসলে তিনি সুস্থ হোক, এটা তারা চায় না। তারা চায় খালেদা জিয়া যেন আরও অসুস্থ থাকেন, যাতে তারা রাজনীতি করতে পারে তাকে নিয়ে ।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করছে এবং সর্বোচ্চ সহায়তা করবে। বিদেশ যাওয়াটা আদালতের এখতিয়ার। সুতরাং আদালতের আদেশ ছাড়া তিনি বিদেশ যেতে পারেন না। তাই এই নিয়ে দয়া করে রাজনীতি করবেন না।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু সংগঠন আছে পৃথিবীতে, যারা মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করে। তারা কাউকে কিল মারলে বিবৃতি দেয়, কাউকে ঘুষি মারলেও বিবৃতি দেয়। কিন্তু তাদের আত্মীয়-স্বজন কাউকে মেরে ফেললে কোনো বিবৃতি নাই। ২০১৩-১৪ সালে যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ফিলিস্তিনের শিশুরা যখন ঢিল ছুড়ে তার প্রতিবাদে ইসরাইলের সৈন্যরা যখন পাখির মতো শিশুদের শিকার করে, তখন কোনো বিবৃতি নাই। আপনাদের অনুরোধ জানাবো, এই দিকগুলোর দিকেও আপনারা তাকাবেন। মায়ের কান্নার কান্না যখন আপনাদের কানে পৌঁছে না, তখন আপনারা কিসের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন।’
‘বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই অগ্রযাত্রা অনেকের পছন্দ নয়। সেজন্য নানা ছল-ছুতায় প্রথমে আনে মানবাধিকার, তারপরে বলে সুষ্ঠু পথে নির্বাচন হয়নি। আমাদের দেশে অবশ্যই আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং জনগণের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হবে। সরকার সর্বোচ্চভাবে নির্বাচন কমিশনকে এটি করার জন্য সহযোগিতা করবে।’
‘দয়া করে আমাদের কেউ গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না’ অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পার্লামেন্ট ভবনে ঘেরাও করে কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নাই। আমাদের দেশে পরাজিত প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরাজয় মেনে নেয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও পরাজয় মেনে নেননি। যারা গণতন্ত্র শিক্ষা দিতে চান, তাদের অনেকের দেশেই গণতন্ত্র নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এদেশের মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ করে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘আজ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিতে চাই, দেশে আবার সন্ত্রাস করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপি আবার অগ্নিসন্ত্রাস করার পরিকল্পনা করেছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে, এইভাবে আন্দোলন করে হেঁটে, বসে, দৌড়ে কিংবা হামাগুড়ি কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়নি। তাই এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিশ্ব বেনিয়ারা যাতে ফায়দা লুটতে পারে, সেই পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য তারা সন্ত্রাসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে। তাই আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে, থাকবে। কাউকে আর ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।’
মায়ের কান্না সংগঠনের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিয়া লেলিনের সভাপত্বিতে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।