চলতি বছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুত মানবিক সহায়তার মাত্র ৩৭ শতাংশ অর্থ পাওয়া গেছে। যথেষ্ট পরিমাণ সহায়তা না পাওয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট ও পুষ্টিহীনতা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সরকারের অন্তত দুই সচিব। সভার কার্যপত্র সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এর পর থেকেই যৌথ সাড়াদান কর্মসূচির (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান-জেআরপি) আওতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এ সহায়তার অর্থ দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক সহায়তার জন্য সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)। গ্রুপটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছরই প্রতিশ্রুত সহায়তা চেয়ে বরাদ্দ এসেছে কম। চলতি বছর ৮৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, চলতি বছরের প্রায় আট মাসে সহায়তা পাওয়া গেছে প্রতিশ্রুতির মাত্র ৩৭ শতাংশ।
মূলত ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, জ্বালানি ও চিকিৎসার মতো বিষয়ে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। আর শিক্ষার বিষয়ে সহায়তা করে ইউনিসেফ। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তারা অর্থ ব্যয় করে থাকে। প্রায় ১৫০টি সংস্থা রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য নিয়ে কাজ করে আসছে। তবে সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিছু সংস্থা যথেষ্ট তহবিল পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সংস্থা তাদের কর্মসূচি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় থাকা সরকারি সংস্থা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রত্যাশা অনুযায়ী আসছে না, যা এখন আরও কমে গেছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জানানো হয়, সরকার এ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারের কাছে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৬ জন রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করেছে। তবে মিয়ানমার সরকার সেখান থেকে ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৮ জনের তালিকা বাংলাদেশের কাছে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে প্রথম পর্যায়ে যাচাই-বাছাইপূর্বক ৬১ হাজার ৯২১ জানের তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তারা ৩৭ হাজার ৭০০ জনের তালিকা পাঠিয়েছে। এখানে একটি বিশাল পার্থক্য রয়েছে।
আইএসসিজির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জেআরপিতে ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছিল ৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলারের বিপরীতে ৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ২০১৯ সালে ৯২ কোটি ডলারের বিপরীতে ৬৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাওয়া যায়। পরবর্তী ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে প্রতিশ্রুতির যথাক্রমে– ৬০ শতাংশ, ৭৩ শতাংশ ও ৬৩ শতাংশ সহায়তা পাওয়া
যায়।