বাজেটে ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছরই ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয় সরকার। যার সিংহভাগই আসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। কিন্তু তারল্য সংকটে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে পারছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া অব্যাহত রেখেছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ মে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৬৭ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। যা আগের অর্থবছরে নেওয়া হয়েছিল ৩১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজারে টাকা ছাড়ার ফলে নোটের পরিমাণ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১ টাকা বাজারে ছাড়লে তা ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। মার্চে ভোক্তা মূল্য সূচক ৭ মাসে সর্বোচ্চ বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হওয়ায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে আসে।
গত বছরের মে মাসে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। যা ২৮ শতাংশ কমে গত সপ্তাহে ৩০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ডলারের দর বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি, বাজারে পণ্য সংকট, মূল্যস্ফীতি ও টাকার সরবরাহসহ সবই একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত।
গত ১ জুলাই থেকে ১০ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। ফলে ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৭৮ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা হয়েছে।
অর্থবছর-২০২৩ এর জন্য এ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ ২ মাসে ঋণের পরিমাণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ সরকারকে উন্নয়ন ও রাজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায়, সরকার শুধু এপ্রিল মাসে ব্যাংক খাত থেকে ২৯ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে; যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের কোনো মাস থেকে নেওয়া সর্বোচ্চ ঋণ। মার্চে সরকার ঋণ নেয় ১৭ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে নেয় ৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের ধারণা, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া অর্থের একটি বড় অংশ সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই ভল্ট থেকে টাকা বের করে সেগুলো কিনে নেয়; এ টাকার একটি অংশ আবার নতুন টাকা ছাপানোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। একে বলা হয় রিভলভমেন্ট (অদলবদল)। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এপ্রিলে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি অদলবদল করেছে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে মোট অদলবদল ৬৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
চলতি অর্থবছরে সরকার নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। এরমধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এপ্রিল পর্যন্ত এনবিএফআইসহ অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া কমেছে ৪ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।