আসন্ন বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বক্তব্যে খেজুর আমদানিতে শুল্ক ও মূসক আরোপ করার কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি উপকরণ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সকল কৃষককে স্মার্ট কার্ড প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ভর্তুকির পাশাপাশি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কৃষি খাতে অবদানের জন্য সরকার কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ‘এআইপি’ সম্মাননা পদকের প্রবর্তন করেছেন এবং ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এ পদক প্রদান করা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। চলতি বছর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বেড়ে চলা খাদ্য সংকট বিশ্বকে একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়া যুদ্ধের কারণে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুত কমার পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি)।
এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাতের ফলে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। আর বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান ডেভিড বিসলি বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যের দাম এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে, তা বিশ্বের দরিদ্র মানুষের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে কৃষকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই এ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
স্বাধীনতা-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে ১৯৭২ সালের ৩০ জুন প্রথম বাজেট পেশ হয়। তখন মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ওই দিন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, অর্থাৎ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর আরও দুবার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ, সেটি সবশেষ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকার।
স্বাধীনাতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৩ জন অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণা করেছেন। এরমধ্যে মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। দুজনেই ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিতই আওয়ামী লীগের হয়ে টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন। তিনি প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-৮৩ সালে, এরশাদের শাসনামলে। সেটার আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। আর সবশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তার বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার।