আধুনিক জীবনযাত্রার পদ্ধতি, পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস, নিজের যত্ন নেওয়ার সময়ের অভাব শরীরে ডেকে আনে নানা অসুখ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যত সময় গড়াচ্ছে তত বেশি করে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছেন সবাই। শরীরে বাসা বাঁধছে নানা অসুখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, ওবেসিটি, কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের মতো সমস্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তার হাত ধরেই জন্ম নিচ্ছে হৃদরোগ। তবু হৃদরোগের বিষয় এখনো মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, সেই ধারণাই স্পষ্ট নয় অনেকের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর সঙ্গে-সঙ্গে ঠিকমতো চিকিৎসা শুরু না হলে পরিণতি মৃত্যু। সেক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হলে কিছুটা সময় পাওয়া যায়। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে রোগী অনেক দিন বাঁচতে পারে। অর্থাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কী এই পার্থক্য? চলুন জেনে নিই—
হার্ট অ্যাটাক কী?
করোনারি ধমনির মধ্যে যখন একটি ব্লক তৈরি হয়, তখন হার্ট অ্যাটাক হয়। এই ধমনিগুলোর মধ্য দিয়ে রক্ত কার্ডিয়াক পেশি পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। যেহেতু হৃৎপিণ্ড একধরনের পেশি, সুতরাং তার কাজের জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত। যখন করোনারি ধমনিতে ব্লকেজ তৈরি হয়, হৃৎপিণ্ডে প্রয়োজনীয় রক্ত আসা বন্ধ হয়ে যায় বলে হার্ট অ্যাটাক হয়। যদি ধমনিগুলোর ব্লকেজ দ্রুত অপসারণ করা না যায়, তাহলে হৃৎপেশি মরে যেতে শুরু করে।
হার্ট অ্যাটাকের পর কী হয়?
হার্ট অ্যাটাকের সময়ে প্রচণ্ড বুক ব্যথার অনুভূতি হয়। এর সঙ্গে বুকে প্রচণ্ড চাপ, বুক দুই পাশ থেকে চেপে আসা ইত্যাদি সমস্যা অনুভূত হয়। কেউ কেউ বাম কাঁধ, বাম বাহু থেকে শুরু করে শরীরের বাম দিকের ওপরের অংশেও ব্যথা অনুভব করতে পারেন। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে যেমন হয়, হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড তেমন হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দেয় না।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?
হৃৎপিণ্ড যখন হৃৎকম্পন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তখন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। হৃৎপিণ্ডে হঠাৎ গোলযোগের ফলে এটি হয় এবং এর ফলে হার্টবিট অনিয়মিত হতে শুরু করে। হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে এর প্রাথমিক পার্থক্য এটাই যে হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃৎপেশিতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেলেও হার্টবিট থেমে যায় না।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর কী হয়?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে যেহেতু হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়, তাই প্রথমেই মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায় না। অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া না গেলে, এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার মানুষের মাত্র কয়েক মিনিটেই মৃত্যু হতে পারে।