বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই অবস্থান চীনের অর্থনীতির। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আকার পায় ২৭ ট্রিলিয়ন ডলার (নোমিনাল জিডিপি)। সেখানে চীনের অর্থনীতির আকার প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার (নোমিনাল জিডিপি)। এর পরের অবস্থানের দেশগুলোর অর্থনীতির আকার ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘরে। অথচ চীনেরও আছে উন্নত প্রযুক্তি, জনসংখ্যার তুলনায় ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টির নজির এবং শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ এবং উন্নত বিশটি ব্যাংকের মধ্যে দশটিই চীনে অবস্থিত। উল্লেখ্য, চীন যেহেতু বিশাল জনসংখ্যার দেশ, তাই সেখানে আত্মকর্মসংস্থান বেকারত্ব দূর করতে ভালো ভূমিকা রাখে।
আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেশ সুচিন্তিতভাবে গ্রহণ করেছে। সেগুলো হচ্ছে- (১) ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের বেকারত্বের হার কমিয়ে সর্বনিম্ন পর্যায় নিয়ে আসা, (২) সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, (৩) খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান ও মূলধন পুনরুদ্ধারসহ ব্যাংকিং খাতের সংস্কার এবং (৪) অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করা।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রথম তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে চতুর্থ লক্ষ্য অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নতি এমনিতেই ত্বরান্বিত হবে। কেননা, বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নতির যে কাঠামো তা মূলত এই তিনটি সুনির্দিষ্ট ভিত্তি, যথা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা সর্বনিম্ন বেকারত্বের হার, উন্নত প্রযুক্তি এবং মানসম্পন্ন ব্যাংকিং খাতের ওপর যথেষ্ট নির্ভরশীল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার-২০২৪-এ অর্থনৈতিক উন্নতির এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করতে পেরেছে।
একটি বিষয় মোটামুটি স্পষ্ট যে, বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করতে হলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। প্রযুক্তিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেইসঙ্গে দেশে মানসম্পন্ন ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নত এবং অনুন্নত উভয় বিশ্বের যে সকল দেশ অর্থনীতির এই তিনটি উপাদানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে তারাই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করতে পেরেছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আওয়ামী লীগ এই কাজটি খুব ভালোভাবে করতে পেরেছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে সেখানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে আত্মকর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করতে ভূমিকা রাখছে যেসব সুযোগ তাকে এখন সুশৃঙ্খল করে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতে যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে দেশের অভ্যন্তর এবং বাইরে থেকে অর্থ উপার্জন করছে তাদের স্বীকৃতি দেওয়ায় আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বেশি অবারিত হয়ে গেছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের কাজও শুরু হয়ে গেছে। গতবছর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তখন থেকেই স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে এবং এগিয়ে চলেছে। আজ থেকে দেড় যুগ আগে এভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে।
এরকম একটি অবস্থায় দেশকে সত্যিকার অর্থে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলার উদ্যোগ হাতে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের কর্মসূচি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু উল্লেখ করা হয়েছে বললে কম বলা হবে। একটি পটভূমি উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এভাবে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর।
বর্তমান বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির অত্যাবশ্যিক উপাদান, যথা- ব্যাপক কর্মসংস্থান, মানসম্পন্ন ব্যাংকিং খাত এবং প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার-২০২৪-এ।
লেখক: নিরঞ্জন রায়
সার্টিফাইড অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার। টরেন্টো, কানাডা।