গত মাসে দৈনিক ৮০ হাজার ব্যারেল করে কমেছে ওপেক প্লাসের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন। জোটটির শীর্ষ উত্তোলক দেশ ইরাক, অ্যাঙ্গোলা ও কাজাখস্তান উত্তোলন কমার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত মাসে জোটের মোট উত্তোলন কমলেও রাশিয়ার উত্তোলন বেড়েছে। দেশটি প্রতিদিন ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করে। দৈনিক উত্তোলন বেড়েছে ১০ হাজার ব্যারেল করে। পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার পরও দেশটির জ্বালানি খাত ছিল স্থিতিশীল। যদিও দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী নোভাক আলেকজান্ডার বলেছেন, চলতি মাসে দেশটি দৈনিক পাঁচ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমাবে।
এ বিষয়ে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল জানায়, গত মাসে রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক সব মিলিয়ে দৈনিক ২ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে। জানুয়ারির তুলনায় উত্তোলন দৈনিক ৬০ হাজার ব্যারেল কমেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ওপেক প্লাস উত্তোলন করেছে দৈনিক ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল, যা আগের মাসের চেয়ে দৈনিক ২০ হাজার ব্যারেল কম। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলক দেশ সৌদি আরব গত মাসে দৈনিক ১ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে, যা আগের মাসের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে নাইজেরিয়ার উত্তোলন এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে। দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৪ লাখ ব্যারেলে।
ওপেকের উত্তোলন কমে যাওয়ার পেছনে মোটাদাগে দায়ী করা হচ্ছে ইরাক ও অ্যাঙ্গোলাকে। গত মাসে ইরাকের উত্তোলন প্রতিদিন দেড় লাখ ব্যারেল করে কমেছে। দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেলে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রভাবে ইরাকের একটি পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি সংস্কারের প্রয়োজনে দেশটির সাইহার বন্দর থেকে জ্বালানি তেলের প্রবাহ কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। মূলত এ কারণেই উত্তোলন কমেছে। এছাড়া কিছু প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্যও উত্তোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে একই কারণে অ্যাঙ্গোলার উত্তোলন দৈনিক ৭০ হাজার ব্যারেল করে কমেছে। এ দুই দেশের মতো আরো অনেক দেশ উত্তোলন বাড়ানো কিংবা স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এর মূল কারণ বিনিয়োগের অভাব ও অভ্যন্তরীণ জটিলতা।
গত বছরের শেষ দিকে ওপেক প্লাস দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর পরও জোটের সদস্য দেশগুলো প্রতি মাসেই বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে রাশিয়ার উত্তোলন বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার পরও বেড়েছে। দেশটি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আরোপ করা হয়েছে প্রাইস ক্যাপ। পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশটি ইউরোপের বিকল্প বাজার হিসেবে এশিয়াকে বেছে নিয়েছে। ফলে উত্তোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।