কিশোরগঞ্জের প্রায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে এবার অনুষ্ঠিত হবে ১৯৭তম ঈদুল আজহার জামাত।
দেশের বৃহত্তম এই ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার জামাতের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত আয়োজন করা হয়েছে। জামাত অনুষ্ঠিত হবে ঈদের দিন সকাল ৯টায়।
এ ঈদগাহে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
জানা যায়, ঐতিহাসিক এ মাঠে আশপাশের জেলা ছাড়াও দেশ-বিদেশ থেকে মুসল্লিরা ঈদের জামাতে অংশ নেন। ঈদ জামাতকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিবছর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদ জামাতের জন্য নেওয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ।
শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, ঈদের জামাত শুরুর আগে শটগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হবে। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হবে।
শনিবার (১৫ জুন) সকালে শোলাকিয়া মাঠ পরিদর্শনে যান র্যাব-১৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবিরসহ জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ঈদের জামাতকে ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে ওয়াচ টাওয়ার ছাড়াও সাদা পোশাকে থাকবে পুলিশ। আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছি। মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ের মাধ্যমে চেকিং হয়ে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করবেন। কাউন্টার টেরোরিজম-সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। আশা করি নিরাপদে-নির্বিঘ্নে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতে পারবেন। প্রশাসন সর্বদা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ১৯৭তম পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মোবাইল ও ছাতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা যাবে না।
তিনি জানান, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
র্যাব-১৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ঈদ জামাতকে ঘিরে নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত। প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের নামাজ চলাকালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গিদের অতর্কিত হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন চারজন। সেই থেকে ঈদ জামাতে বাড়তি নিরাপত্তার ওপর জোর দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এ মাঠে ঈদের জামাতে প্রায় সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।