দেশের আলোচিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপসহ মোট চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার সুদ মওকুফের সুবিধা দিয়েছে দুটি ব্যাংক। মোট ১৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে এ সুদ মওকুফ করেছে ব্যাংকগুলো। এস আলম ছাড়াও বাকি কোম্পানিগুলো হলো- নাসা, বিসমিল্লাহ ও এননটেক্স। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, নাসা, বিসমিল্লাহ ও এননটেক্স গ্রুপকে ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক। আর বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের ৩ হাজার ৬১৮ কোটি স্থিতির বিপরীতে ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়। এভাবে ব্যাংক খাতে গত তিন বছরে সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ঋণ গ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদীভাঙন, দুর্দশাজনিত কারণ বা বন্ধ প্রকল্পে আংশিক বা সম্পূর্ণ সুদ মওকুফ করা যাবে। তবে আয় খাত বিকলন ও নিয়মিত ঋণে, সুদ মওকুফ করার নিয়ম নেই। তবে এস আলম গ্রুপ ও নাসা গ্রুপের কারখানা সচল এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের ঘটনা না ঘটলেও আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করেছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অথচ, ২০২১ ও ২০২২ সালে বড় অংকের সুদ মওকুফ করা ব্যাংক দুটি এখন নিজেরাই নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
জনতা ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ, এননটেক্স ও নাসা গ্রুপের ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা দেওয়ার সময় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ। তিনি বলেন, এসব সুদ মওকুফ সুবিধা দেওয়া হয় তিনি এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি এননটেক্সের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। আর নাসা গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান সুদ মওকুফ-পরবর্তী সমুদয় পাওনা শোধ করে এই ব্যাংক থেকে চলে গেছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময়ে তিনি এ ব্যাংকে ছিলেন না। ফলে এ বিষয় তার জানা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে মওকুফ হয় ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে সুদ মওকুফ হয়েছিল ৫ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে মওকুফ হয় ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। তবে এননটেক্স গ্রুপের ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা এবং বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৬০৪ কোটি টাকা সুদ মওকুফ কার্যকর না হওয়ায় সে তথ্য এখানে নেই।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, একসময় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল জনতা ব্যাংক। বেসরকারি খাতের সবচেয়ে পুরোনো ন্যাশনাল ব্যাংক সব সময় মুনাফায় ছিল। বড় ব্যাংক হওয়ায় এ দুই প্রতিষ্ঠানের খারাপ অবস্থার প্রতিফলন পুরো খাতের ওপর পড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫০১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ। মূলধন ঘাটতি ঠেকেছে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকায়। গত বছর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ঠেকেছে ১৫ হাজার ৭২৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। দুটি ব্যাংকই বড় অঙ্কের লোকসান দিয়ে চলেছে।