যেসব ব্যক্তি হুন্ডি ও বিদেশে টাকা পাঁচার করে তাদের অনেক টাকা। এসব অর্থের সবই অবৈধ উপায়ে অর্জন করা। তাই ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের বিপরীতে ১৩০ টাকা অফার করলে তারা ১৫০ টাকা দিয়েও কিনতে পারে। তাই হুন্ডি ও ডলারের খোলা বাজার নিয়ে ঘাবড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে এবিবি’র একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক শেষে সেলিম আর এফ হোসেন এসব তথ্য জানান।
বৈঠকে ১৩টি ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও আর্থিক খাতের চলমান সংকটগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়।
এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, যারা হুন্ডি ও বিদেশে টাকা পাচার করে তাদের কাছে টাকা কোনো বিষয় না। তাদের কাছে সব অবৈধ উপায়ে অর্জিত কালো টাকা। হুন্ডির সাথে ডলারের দর মেলানোর কোনো দরকার নেই। কার্ভ মার্কেটে বছরে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়। তাই এটা নিয়ে এত ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমাদের সার্বিক অর্থনীতির তুলনায় কার্ভ মার্কেটের আকার অনেক ছোট।
তিনি বলেন, অনেক এক্সপোর্ট প্রসিড দেশের বাইরে রয়ে গেছে। পুরোটা এখনো আসেনি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাকি এক্সপোর্ট প্রসিড দেশের ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সুদের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুদের হার বাড়ার ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যের চাপ পড়ছে। এটি হওয়া স্বাভাবিক। এই হার ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে থাকবে।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মরক্কোর মারাকেশে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বৈঠকে গিয়েছিলেন। সেখানে বিভিন্ন মিটিং সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিয়েছেন গভর্নর। সিআইবি নিয়ে আমাদের একটি সমস্যা চলছে। আশা করছি সেটার সমাধান খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে। রেমিট্যান্সের দর বেধে দেওয়া আছে, সেই দামের মধ্যেই সবাই কেনার চেষ্টা করছেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোই এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল উদ্যোশ্য। এটি কমাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে সম্পর্কে আজকের বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে অবহিত করা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হয়তো অন্যান্য ক্ষেত্রেও কিছু প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যে আমানতের সুদহার ও ট্রেজারি বিল বন্ডের রেট বাড়ানো হয়েছে। আমরা এই রেটগুলো বাড়িয়ে টাকাকে আরও বেশি এক্সপেনসিভ করতে চাচ্ছি। এর ফলে নতুন ঋণের পরিমাণ কমবে ও মার্কেটে টাকার সরবরাহ কমবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের দায় পরিশোধ করতে প্রতিদিনই বাজারে ডলার ছাড়ছে। মার্কেটকে বাংলাদেশ ব্যাংক কিভাবে দেখতে চায় সে বিষয়ে এবিবিকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে এবিবির বিভিন্ন চেয়ারম্যান সিআইবির তথ্য আপডেটের বিষয়ে গভর্নর কে অভহিত করেছেন। এছাড়া নন-পারফর্মিং লোন ও চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিয়েও এবিবির সঙ্গে আলোচনা হয়।
এবিবি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রেণীকৃত ও নন-পারফর্মিং লোন বেড়েছে। বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী। এসব ক্ষেত্রে কিভাবে সময় কমানো যায় সেবিষয়গুলো আলোচনায় উঠে এসেছে।
মেজবাউল হক বলেন, আমাদের রপ্তানি ও এর প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে। একই সময়ে বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমাদের এক্সপোর্ট প্রসিড কম আসছে। এর কারণ হিসেবে ডেফার্ড পেমেন্টকে দায়ী করছেন এবিবি। তাই আজকের বৈঠকে ডেফার্ড পেমেন্ট সম্পর্কে অনুৎসাহীত করা হয়েছে।
এছাড়া আজকের এই বৈঠকে ওভারঅল ব্যালেন্স অব পেমেন্টের বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আলোচনা করেছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি অনেক কমিয়ে এনেছি। তবে ফাইন্যান্সিয়াল একাউন্টে এখনো কিছু ঘাটতি লক্ষ্য করছি। তাই আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট স্বাভাবিক করা যায়। উন্নত বিশ্বে সুদের হার অনেক বেশি হওয়ায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা আমাদের জন্য সহজ হচ্ছে না। এরফলে নতুন করে ঋণ বা বিনিয়োগ আনা সম্ভব হয়নি।