শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়া গুজবের কারণে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নতুনভাবে বেশকিছু কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠাচ্ছে বলে গুজব ছড়াচ্ছে একটি চক্র। তবে আপাতত নতুন করে আর কোনো কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানালেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান।
একই সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতি ছাড়া ডিএসই আর কোনো কোম্পানির শেয়ার সরাসরি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠাতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো এসব ভিত্তিহীন তথ্য ও গুজবের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন অ্যাকশন নেবে বলে জানান ডিএসই এমডি। তিনি বলেন যারা এসব গুজব ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে তাদেরকে খুঁজে বের করার কাজ চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের গুজব ছড়াতে না পারে সেই বিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছে ডিএসই।
সম্প্রতি দেশের শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল করে তুলতে বরাবরের মতো আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্বার্থান্বেষীমহল। যার প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে। কয়েকদিন আগে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে গুজব ছড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছিল কারসাজি চক্র। তারপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসই মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল করে তুলে একটি চক্র। তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার নতুন গুজব ছড়িয়েছে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনছে। এমন গুজবের নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যেই বাজারে লক্ষণীয়। তবে এ বিষয়টিও বরাবরের মতই গুজব বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
এবিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান বলেন, বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে ডিএসই জেড ক্যাটাগরিতে পাঠাচ্ছে বলে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে তা ভিত্তিহীন ও গুজব। ডিএসই কর্তৃক নতুন করে কোনো কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো কোম্পানির শেয়ার জেড ক্যাটাগরিতে যাওয়ার মত কোম্পানি নেই। তাছাড়া বিএসইসির আদেশ অনুযায়ী ডিএসই এর বর্তমান ক্ষমতাবলে কোন কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠাতে হলে কমিশনের অনুমতি লাগবে। তবে ভবিষ্যতে সরাসরি জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর ক্ষমতা ডিএসই পেতেও পারে। কিছুদিন আগে যেসব কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সবকিছুই আইন অনুযায়ী এবং বিএসইসিকে অবগত করে করা হয়েছিলো। বিনিয়োগকারীদের ভিত্তিহীন তথ্য ও গুজবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। যারা গুজব ছড়িয়েছে তাঁদেরকে সনাক্ত করতে কাজ করছে ডিএসই। যারা এসব ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এধরনের কাজ করতে কেউ সাহস না পায়।
জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে ২২টি ও গত ০৪ মার্চ নতুন করে আরও ৬টি কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন করে গুজব উঠেছে আরোও বেশকিছু কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যাচ্ছে এবং যেসব কোম্পানির শেয়ারে এখনো ফ্লোরপ্রাইস বহাল রয়েছে সেগুলোর ফ্লোরপ্রাইস উঠে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েকটি কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব তালিকার মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি ইতিমধ্যেই জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে। তারপরেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব ভিত্তিহীন গুজব বিশ্বাস করে আতঙ্কিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে এমন গুজবে পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এর আগে, গত ১০ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেড ক্যাটাগরি ও ফ্লোর প্রাইস নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন বিএসইসি। গুজবের বিষয়ে সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস ও জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কিছু ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, এরকম কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় এমুহূর্তে কমিশনের বিবেচনায় নেই। এরকম গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি এবং ডিএসই।
জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে ৬ কোম্পানি বাদে বাকি সব কোম্পানির শেয়ারের ওপর সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর থেকে ধীরে ধীরে গতি ফিরছিল পুঁজিবাজারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৯ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০ কর্মদিবস উত্থান হয়। এই সময়ে সূচকে যোগ হয় ৩৬৮ পয়েন্ট। আর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১১ কর্মদিবস প্রতিদিন এক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৪ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ কর্মদিবস প্রতিদেন দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। তবে কারসাজি চক্রের মিথ্যা তথ্য ও গুজবে পুঁজিবাজারের এই উত্থানের ধারা ভেঙেছে। ধারাবাহিকভাবে কমেছে লেনদেন ও সূচক উভয়ই।
গুজবের ফলে গত কয়েকদির ধরেই বাজারে পতন অব্যহত রয়েছে। ধারাবাহিত পতনের ফলে গত বুধবার (১৩ মার্চ) ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ফ্লোরপ্রাইসের আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৩২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে দাড়ায়। এর আগে, ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ডিএসই ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। সূচকটির অবস্থান দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯৮০ পয়েন্ট। ওইদিন বিকালে বিএসইসি বাজারে শেয়ারের নিম্নসীমা বা ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করে।
এর আগে, ৭ মার্চ এক্সচেঞ্জটির প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ৫৩ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট হারিয়েছে। এদিন সূচকটি ছিলো ৬ হাজার ১১২ পয়েন্টে। এছাড়াও বাছাই করা কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএস ৩০’ ১২ পয়েন্ট কমেছিলো। আর শরীয়াহ ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসই এস’ কমেছিলো ৭ দশমিক ১২ পয়েন্ট। এদিন থেকেই বাজারে সূচক নিম্নমুখী রয়েছে।
সম্প্রতি জেড ক্যাটাগরি নিয়ে ছড়ানো গুজবের নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে বিদায়ী সপ্তাহে। সমাপ্ত সপ্তাহে (১০ মার্চ-১৪ মার্চ) ডিএসইতে সূচকের সঙ্গে বাজার মূলধন কমেছে ৪৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর এক সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩১ দশমিক ০৭ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১৪৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমেছে।