দেশের নদনদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে কয়েক বছর ধরে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার নদী ও সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দক্ষিণ উপকূলের জেলেরা।
তবে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিবছর প্রধান প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরও নদীতে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না বলে জানিয়েছেন তারা। এমনটি হলে প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্নির্ধারণ করতে মত দেওয়া হয় বিভিন্ন মহল থেকে। তবে সেই মতামত আমলে নেয়নি সরকার।
বিভিন্ন এলাকার জেলেরা এবারও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে নদনদীতে ইলিশ শিকার করেছেন। মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রশাসনের সহায়তায় এই জেলেদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় গত ২২ দিনে সহস্রাধিক জেলেকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন। জেলেরা বলছেন, বাংলাদেশে যে সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকে, ঠিক সে সময় অন্য দেশের জেলেরা ইলিশ ধরছে। সুফল ধরে রাখতে হলে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ভারতকে নিয়ে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে।
বাংলাদেশে ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্নির্ধারণে মত দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালে ইলিশ আহরণে নিষিদ্ধকাল ছিল ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে পদ্মায় মা ইলিশ প্রবেশ করেছিল ২০ নভেম্বরের পর। মেঘনার ক্ষেত্রেও দেখা যায় সময় শুরুর চার-পাঁচ দিন পর মা ইলিশ ডিম দেওয়ার জন্য প্রবেশ করেছে। আবার নিষিদ্ধকাল শেষ হওয়ার পরও এসব নদীতে মা ইলিশের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
অধ্যাপক ইয়ামিন বলেন, আমরা ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় দেখেছি, নিষিদ্ধকাল শেষ হওয়ার পরও ডিমে ভরা মা ইলিশ থেকে গেছে পদ্মা, মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারায়। তাই ইলিশ সম্পদকে রক্ষা করার জন্য নিষিদ্ধকাল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারা এবং পদ্মা, যমুনার জন্য আলাদা প্রজনন মৌসুম ঠিক করা প্রয়োজন পড়তে
পারে।