আলোচিত আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরান খানের নামে সমন জারি করেছে পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব)। সমনে তাকে আগামী ২৩ মে ন্যাবের রাওয়ালপিন্ডি কার্যালয়ে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের জামান পার্ক এলাকায় ইমরানের বাসভবনে গিয়েছিল ন্যাবের দুই সদস্যের একটি দল। সেখানে পিটিআই চেয়ারম্যানের লিগ্যাল টিমের সদস্যদের কাছে সমন হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জিও টিভি।
এর আগে গত ৯ মে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ইমরান খানকে। পিটিআই চেয়ারম্যানকে এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১ মে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ন্যাব।
ন্যাবের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজির আহমেদ বাট স্বাক্ষরিত সেই পরোয়ানা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সোহাওয়া শহরে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের নামে ব্রিটেনের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে রাষ্ঠীয় কোষাগার থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড দিয়েছিলেন ইমরান খান, তার বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবি এবং ইমরানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের কয়েকজন জেষ্ঠ্য নেতা।
এদিকে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ শুরু করে পিটিআই। পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের বিভিন্ন শহরে সরকারি বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ভবন ও কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করেন তারা। এমনকি তাদের রোষের শিকার হয় অনেক সেনা কর্মকর্তারা বাসভবনও।
বিক্ষোভ গুরুতর রূপ নেওয়ায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশজুড়ে সেনা নামাতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ইমরানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণার পাশপাশি আল-কাদির ট্রাস্টসহ বিভিন্ন মামলায় ইমরান খানকে জামিন দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
সেই নির্দেশনা মেনে ইমরান খানকে এই মামলায় আগামী ৩১ মে পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন ইসলামাবাদ হাই কোর্ট।
এদিকে, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল— তাতে ভাঙচুর ও নাশকতা কর্মকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পাকিস্তানজুড়ে অভিযান শুরু হয়েছে। দেশটির ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে অবস্থান করা সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গ্রেপ্তারদের বিচার করা হবে সামরিক আইনের আওতায়।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পাঞ্জাব রাজ্য সরকারে আসীন অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করে, জামান পার্কে ইমরানের বাসভবনে আত্মগোপন করে আছেন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন সন্ত্রাসী এবং যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের পুলিশের হাতে হস্তান্তর না করা হয়, সেক্ষেত্রে তার বাড়ি তল্লাশি করবে পুলিশ।
ইমরান খান সেই অভিযোগের কোনো জবাব দেননি; কিন্তু ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পেরিয়া যাওয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তার বাড়িতে তল্লাশির জন্য যায় পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।
কিন্তু, ইমরানের বাসভবনের ভেতর কোনো সন্ত্রাসীকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
সূত্র : জিও টিভি