পবিত্র রমজান মাসে সুষ্ঠু সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে রাজধানীর ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান। এ ছাড়া ইফতারের আগে যানজটের কারণ এবং তার প্রতিকার জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বিকাল সাড়ে তিনটায় অফিস ছুটি হলেও দেখা যায় যে বিকাল ৫টার পূর্ব থেকে ইফতারের সময়ের আগ পর্যন্ত অধিকাংশ যানবাহনগুলো তড়িঘড়ি করে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। এতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইন্টার সেকশন ও শেষ মুহূর্তে অযাচিত যানজট তৈরি হয়। তাই যানজট এড়াতে অফিস ছুটির সময় অর্থাৎ বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে বা এর কাছাকাছি সময় থেকে অফিস অথবা কর্মস্থল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তাড়াহুড়ো করে কর্তব্যস্থল থেকে বাড়ি ফেরার সময় ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল পরিহার করে গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোরও পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোডগুলোতে অনেক সময় সড়কের পাশে বা বিভিন্ন ইমারত অথবা স্থাপনা সংলগ্ন স্থানে অযাচিতভাবে যানবাহনের পার্কিং দেখা যায়, যা সড়কের প্রশস্ততাকে কমিয়ে দেয় এবং যানবাহন চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি না করতে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ রইল। এছাড়াও রমজানের প্রথম থেকেই অনাকাঙ্ক্ষিত পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ।
গণপরিবহণের মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গণপরিবহণে যাত্রী ওঠানামা করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত বাস স্টপেজগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যত্রতত্র যাত্রী উঠা-নামা করানো যাবে না। এক্ষেত্রে সিটি সার্ভিসগুলোকে গেটলক সিস্টেম প্রবর্তন করতে হবে। অনেক সময় বিভিন্ন টার্মিনালের সম্মুখ প্রান্তে গণপরিবহণগুলো একাধিক স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। সেটা কিছুতেই কাম্য নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ভারী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় সেই সময়সীমা না মেনেই তারা চলার চেষ্টা করে। যাতে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই তাদের চলাচলের বিষয়টি মেনে চলতে হবে।
ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিভিন্ন সময় ঢাকা শহরের ছোট বড় সড়কে মেরামতের কাজ চলে। জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে রমজান মাসে এসব সড়ক চলাচল উপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মার্কেটকেন্দ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সচল রাখার জন্য বিভিন্ন মার্কেটের কমিউনিটি পুলিশ ও ভলান্টিয়ারদের (স্বেচ্ছাসেবী) অ্যাক্টিভ করা হয়েছে। তারা ডিএমপি ট্রাফিক পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে কাজ করে যাচ্ছে। মার্কেটকেন্দ্রিক অযাচিত পার্কিংয়ের বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে। রমজান মাসকে ঘিরে রাস্তায় কোনো ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ডিএমপি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিআরটি প্রকল্পের বেশ কিছু সুফল নগরবাসী পেতে শুরু করেছে। সম্প্রতি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ানবাজার এলাকায় নতুন র্যাম্প চালু হয়েছে, তা সর্বসাধারণের চলাচলে সর্বোচ্চ ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ডিএমপি ট্রাফিক ডিভিশনের প্রধান ফোকাস মহানগরীর আপামর জনসাধারণ। ডিএমপি কমিশনারের দিকনির্দেশনায় জনগণের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা পৌঁছে দিতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে আরও সুসংহত ও সংগঠিত করাই ট্রাফিক বিভাগের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে অনেকগুলো সংস্থার অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। এই সংস্থাগুলোর সঙ্গে কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।