ইতিকাফ শব্দটি আরবি। যার অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, নিজেকে কোনো স্থানে আবদ্ধ রাখা ইত্যাদি।
শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ২০ রমজানের সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। যা মুসলমানদের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।
জামে মসজিদের অধিভুক্ত গ্ৰাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো একজন কিংবা একাধিক ব্যক্তি ইতিকাফ করলে তা সবার পক্ষ থেকে আদায় করা হয়ে যাবে।
রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করার অনেক গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। বরকতপূর্ণ রাত লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি, গুনাহ মুক্ত জীবন গঠন, সংগোপনে মহান রবের ইবাদত, আত্মিক উন্নতি সাধন করা। জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো রবের দরবারে উপস্থাপন করা।
ইবনে উমার (রা.) বর্ণনা করেন, রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন। (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৭১)
ইতিকাফ অবস্থায় যা করণীয়:-
১. অধিক পরিমাণে নফল নামাজ আদায় করা, ২. পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা, ৩. জিকির আজকার করা, ৪. দোয়া করা, ৫. ইস্তেগফার ও হাদিসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার দোয়াগুলো পাঠ করা। ৬. বিশেষ করে কদরের রাত্রিগুলোতে অর্থাৎ বিজোড় রাত্রিগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের নফল আমল করার চেষ্টা করা।
ইতিকাফ অবস্থায় যা বর্জণীয়:-
১.চুপচাপ বসে থাকা, ২. গীবত বা পরনিন্দা না করা। ৩.জিনিসপত্র মসজিদে এনে বেচাকেনা করা, ৪.ঝগড়া করা, ৫. অনর্থক কথাবার্তা বলা, ৬. অপ্রয়োজনীয় গল্প জুড়ে দেওয়া।
ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধ:-
১.মসজিদে আহার করা, ২. পেশাব-পায়খানার জন্য বাহিরে যাওয়া, ৩. আজান দেওয়া জন্য বাহিরে যাওয়া ৪.গোসলের জন্য বাহিরে যাওয়া, ৫. জুমার নামাজের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হওয়া যাতে নিকটবর্তী জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার পূর্বে ২/৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করা যায় ।
যেসব কারণে ইতেকাফ ভেঙে যায়:-
১.ওজর বশত বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা, ২. বিনা কারণে মসজিদের বাহিরে যাওয়া, ৩. স্ত্রী সহবাস করা, ৪. ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।
বান্দার নিকট লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি ও এ রাতের ঘোষিত ফজিলত লাভে ইতেকাফের চেয়ে উত্তম কোনো আমল নেই। তাই এই সুযোগকে মূল্যায়ন করে যথাযথ কল্যাণ লাভের চেষ্টা করা উচিত।