ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উন্নত অস্ত্র, গোলাবারুদ আর অর্থের জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। ধারাবাহিকভাবে সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল অস্ত্র সাহায্য পেলেও বর্তমানে সৈন্য সংকটে ভুগছে তার দেশ।
সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া একটি প্রবন্ধে এ কথা স্বীকারও করেছেন ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ভ্যালেরি জালুঝনি। বলেছেন, ইউক্রেনে এখন সেনা নিয়োগ আর প্রশিক্ষণ গুরুতর একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তবে দেশের এমন পরিস্থিতিতেও যুদ্ধে যেতে চায় না ইউক্রেনের নারী-পুরুষরা। তবে সামরিক বাহিনীতে আরও কত মানুষের প্রয়োজন সে তথ্য প্রকাশ করেনি ইউক্রেন।
ইউক্রেনে পূর্ণ আক্রমণ শুরুর একটি সামরিক আইন জারি করেছিল রাশিয়া। আইনটির অধীনে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি সব পুরুষকে সামরিক পরিষেবা দিতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। সামরিক বাহিনীতে নারী নিয়োগে পরবর্তী সময়ে আইনটি আপডেটও করা হয়েছিল। কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা চালু করা হয়েছিল সামরিক আইনে। ১৮ থেকে ৬০ বছরে বয়সি পুরুষদের দেশ ছেড়ে যেতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকরা সামরিক বাহিনীতে যোগদানের আহ্বানে কতটা সাড়া দিচ্ছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন।
সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান নিয়ে ইউক্রেনের বেশ কয়েকজন নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেছে সিএনএন। তার মধ্যে একজন ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ‘খারটিয়া’ ব্রিগেডের সঙ্গে যুক্ত মেজর ভিক্টর কিসিল। তিনি বলেন, ‘যদি আজকের মতো যুদ্ধ চলতে থাকে তাহলে নিয়োগ এড়ানোর কোনো উপায় নেই।’ তবে বেসামরিক মানুষ খুব শিথিল হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন সামরিক বাহিনীর বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবক মার্ক হোলোভেই (২৯)।
তিনি বলেন, ‘বেসামরিকরা অনেকটাই স্বস্তিতে আছেন। কেউ হয়তো ডান্স ক্লাব অথবা নাইট ট্যাক্সিতে কাজ করছেন। তাদের শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না হওয়া পর্যন্ত মানুষ ভুলে যায় আমরা যুদ্ধের সময়ে বাস করছি।’ সেনাবাহিনীতে নারীদের যোগদানের বিষয়ে সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলেছেন একটি ফার্মেসি নেটওয়ার্কের মার্কেটিং ম্যানেজার মারিয়া জাইকা (৩১)। সেনাবাহিনীতে যৌনতার হার অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেন, ‘যৌনতার মাত্রা বেশি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন সামরিক বাহিনীতে থাকা পুরুষরা। আর এসব কারণেই তারা তাদের গার্লফ্রেন্ড অথবা স্ত্রীদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে খুব বেশি সমর্থন করেন না।’
ইউক্রেনের একজন আইটি বিশেষজ্ঞ ইয়েভেন (৩২)। সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করতে চান তিনি। ইয়েভেন বলেন, ‘আমি যদি আগামীকাল কোনো খসড়া নোটিশ পাই তাহলে একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে এটিকে চ্যালেঞ্জ করব। ইয়েভেন আরও বলেছেন, ‘সবাই দায়িত্ব নিয়ে কথা বলে। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে। এই দেশ আমাকে কী দিয়েছে। আমি কী তার কাছে ঋণী? আমার সামরিক প্রশিক্ষণ না থাকলে আমাকে সম্মুখ সারিতে দিয়ে কী লাভ? হয়তো আমাকে দুই মিনিটের মধ্যে হত্যা করা হবে। এর চেয়ে দেশে কোনো কাজ করে অর্থনীতিকে সমর্থন করা বেশি ভালো।’
ইউক্রেনের একজন আইটি কর্মী ভ্লাদ (৩০)। সেনাবাহিনীতে যোগদানের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধে যেতে চাই না। আমি মানসিক বা শারীরিকভাবে প্রস্তুত নই। আমি একটি খসড়া বিজ্ঞপ্তি এড়াতে চেষ্টা করব। আর দুর্ভাগ্যবশত আমি মনে করি যে, ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত নয়। আর এর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি, অর্থ বা অস্ত্র আমাদের নেই।’