দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় খাত রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা। ডলার সংকটের মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে প্রবাসী আয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৯ কোটি ডলার। এই ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে পেছেনে ফেলে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন আরব আমিরাতের প্রবাসীরা।
আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশি প্রবাসীরা ১ হাজার ৪৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ১ হাজার ৭৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। এসময় সর্বোচ্চ ১৯৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার এসেছে আরব আমিরাত থেকে। আগের অর্থবছরের পুরো সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিলো ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।
আলোচ্য এই সময়ে প্রবাসী আয় পাঠানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সৌদির প্রবাসীরা ১৪২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময় এ দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে সৌদির প্রবাসীরা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলো।
দেশে ডলার পাঠানোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশটি থেকে এসেছে ১৩৬ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলো দেশটি। তখন দেশটি থেকে মোট রেমিট্যান্স এসেছিলো ২০৮ কোটি ৪ লাখ ডলার।
সদ্য সমাপ্ত বছরের ডিসেম্বরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৯৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। তার আগের বছর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭০ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৯ কোটি ডলার।
সমাপ্ত বছরের পুরো সময়ে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। যা তার আগের বছরের চেয়ে ৬৩ কোটি ডলার বেশি। ২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি ডলার।
এর আগে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ডিসেম্বর মাসে। সদ্য সমাপ্ত এই মাসটিতে প্রবাসীরা ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রবাসীরা ২১৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত দুই অর্থবছরের মধ্যে একক মাস হিসাবে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই- অক্টোবর সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ঢাকা বিভাগের প্রবাসীরা। আর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে রংপুর বিভাগে। আলোচ্য এই সময়ে ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ৪২৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ঢাকা জেলায়, যার পরিমাণ ৩৬৩ কোটি ডলারের বেশি। আর রংপুরের আট জেলার প্রবাসীরা ১০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছে। এ বিভাগে সবেচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে রংপুর জেলায় ২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ৩০৫ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এ বিভাগের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পেয়েছে চট্টগ্রাম জেলা, যার পরিমাণ ১০২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এ বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার এসেছে কুমিল্লা জেলায়।
সিলেট বিভাগের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১২০ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এ বিভাগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পেয়েছে সিলেট জেলার প্রবাসীরা। যার পরিমাণ ৬৪ কোটি ডলার। সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন মাত্র ১৫ কোটি ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মোট প্রবাসী আয় এসেছে ৩৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এ বিভাগের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে যশোর জেলায়, যার পরিমাণ ৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। এ বিভাগের নড়াইল জেলায় সর্বনিম্ন ২ কোটি ২২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭ কোটি ডলার। এ বিভাগের সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে বগুড়া জেলার প্রবাসীরা।
এছাড়া বরিশাল বিভাগে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এ বিভাগের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি৪৬ লাখ ডলার বরিশাল জেলায়। ঝালকাঠি জেলার প্রবাসীরা সর্বনিম্ন ২ কোটি ১৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন।
অপরদিকে ময়মনসিংহের চারটি জেলার সম্মিলিত প্রবাসী আয় এসেছে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এ বিভাগের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ময়মনসিংহ জেলায়। যার পরিমাণ ৭ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। এখানে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় পেয়েছে শেরপুর জেলা। জেলাটির প্রবাসীরা অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে মাত্র ১ কোটি ৩১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।