এপ্রিল ১৬, ২০২৪

ইউরোপের একাধিক দেশ স্বেচ্ছায় নিজস্ব মুদ্রা ত্যাগ করে একক মুদ্রা গ্রহণ করে অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিয়েছে৷ ২৫ বছর আগে ইউরোপীয় অভিন্ন মুদ্রা হিসেবে ইউরো চালু করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠন করা হয়৷ এরপর ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১১টি সদস্য দেশে ‘অদৃশ্য’ মুদ্রা হিসেবে সমান্তরালভাবে ইউরো চালু হয়৷ ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম ইউরো ব্যাংক নোট ও পয়সা হিসেবে সেন্ট সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ সেইসঙ্গে সদস্য দেশগুলির জাতীয় মুদ্রা লোপ পায়৷ বর্তমানে ইইউ-র ২০টি দেশে এই মুদ্রা চালু আছে৷ ৩৪ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ এই মুদ্রা ব্যবহার করছেন৷

বুধবার সন্ধ্যায় জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক– ইসিবি-র রজত জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়৷ ব্যাংকের বর্তমান প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ এ দিন ২০টি সদস্য দেশের সংবাদপত্রে ব্যাংকের সাফল্য তুলে ধরেন৷ ইউরো এলাকায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইসিবি-র ভূমিকার উপর জোর দেন তিনি৷ অনেক বছর ধরে সেই মাত্রা কম থাকার পর বর্তমানে মূল্যস্ফীতির উচ্চ হারে রাশ টানতে ইসিবি উদ্যোগ নিলেও অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলানোর কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি৷ তবে সেই মাত্রা দুই শতাংশে ফিরিয়ে আনতে সূদের হার বাড়ানোসহ সব রকম পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন লাগার্দ৷

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রোব্যার্তা মেৎসোলা এবং ইইউ সরকার পরিষদের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল ইসিবি-র জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ শলৎস ইউরোপীয় অভিন্ন মুদ্রাকে ইউরোপীয় সমন্বয়ের সবচেয়ে সফল প্রকল্পগুলির অন্যতম হিসেবে বর্ণনা করেন৷ তার মতে, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্থিতিশীলতার নোঙর’ হিসেবে কাজ করছে৷ ভবিষ্যতে আরও দেশ অভিন্ন মুদ্রা হিসেবে ইউরো গ্রহণ করবে বলে শলৎস আশা প্রকাশ করেন৷

ইউরোপীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ইউরো মুদ্রা ও ইসিবি-র ভূমিকার প্রশংসা সত্ত্বেও এই প্রকল্পের কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বিতর্ক কম নেই৷ কারণ ২০টি দেশে অভিন্ন মুদ্রা চালু হলেও সে সব দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে কোনো সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা এখনো নেই৷ ফলে প্রায়ই স্বার্থের সংঘাত দেখা যায়৷ বিশেষ করে ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে মৌলিক নীতি নিয়ে মতবিরোধ বার বার সমস্যা সৃষ্টি করে৷

ইউরো মুদ্রার এমন অন্তর্নীহিত দুর্বলতা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ইসিবি-র ভূমিকা বার বার প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ বিশেষ করে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে ইউরো-র স্বার্থ রক্ষায় পরিস্থিতি সামল দিতে ইসিবি যেভাবে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে, তা আর্থিক বাজার স্থিতিশীল করতেও সাহায্য করেছে৷ বিশেষ করে ২০১২ সালে ইউরো এলাকায় সংকটের সময়ে ইসিবি-র তৎকালীন প্রধান মারিও দ্রাগি ‘ওয়াটএভার ইট টেকস্’ শীর্ষক ভাষণে যে কোনো মূল্যে ইউরো বাঁচানোর অঙ্গীকার করে গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন৷ তবে অসময়ে সুদের হার বাড়ানো বা কমানোর ক্ষেত্রে ইসিবি-র কিছু ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, এএফপি

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *