নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করেছেন, তার নিজের ও দেশের মানুষের ওপর বালা-মুসিবত এসেছে। তিনি বলেছেন, এগুলো থেকে অতিক্রম করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই, রেহাই নেই। মানুষের রেহাই পাওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে।
এর আগে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। আগামী ২ মে মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য তারিখ ধার্য করেছেন বিচারক।
এদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের আদেশের পরে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, এখন রমজানের দিন। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, বালা-মুসিবত থেকে আমরা বাঁচি। আমাদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত। আমার ওপর ব্যক্তিগত বালা-মুসিবত, সহকর্মীদের ওপর এবং দেশের ওপরও। তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা দোয়া করি। সামনে ঈদ আসছে, খুশির দিন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, আমরা যেন সত্যি সত্যি খুশির ঈদ উদযাপন করতে পারি। তার সঙ্গে পহেলা বৈশাখ। আরও খুশি। সবকিছু একসঙ্গে। এরমধ্যে বালা-মুসিবত থেকে কীভাবে উদ্ধার পাব, সবাই মিলে চিন্তা-ভাবনা করি। এককভাবে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি বালা-মুসিবতে সমষ্টিগতভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত। কাজেই এগুলো থেকে অতিক্রম করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই, রেহাই নেই। মানুষের রেহাই পাওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে।
এই নোবেল বিজয়ী আরও বলেন, আমরা নিজের মনে কাজ করে যাই, করে যাচ্ছিলাম। কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে কাজ করি না। কতগুলো অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করি, সত্য নিয়ে কাজ করি। দেশ-বিদেশের মানুষ বিশ্বাস করছে যে কারণে তারা উৎসাহিত। মনে হয়েছে, এটা মানুষের মঙ্গলের জন্য। সেজন্য দেশ-বিদেশের নেতারা এটা জানতে চায়, বুঝতে চায়। নিজ দেশে প্রয়োগ করতে চায়। এজন্য নানা দেশে যাই, যেতে হয়। নিজের ফুর্তির জন্য যাওয়া তো না, এটা তাদের নেহায়েত আগ্রহে। আমার মাঝে মাঝে দুঃখ হয়, সারা দুনিয়া বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে চায়। আমাদের গৌরববোধ করতে হয়। তা না করে আমরা এমন কাজ করছি, আমরা যেন পাপের কাজ করে ফেলেছি। এমন অনুভূতি হওয়ার তো কোনো কারণ ছিল না।
ড. ইউনূস আরও বলেন, আইনের শাসন বলে যে জিনিস, সেটা আমরা পাচ্ছি না কোথাও। আমরা এদেশের অংশীদার, আমরা সবাই মিলেই দেশ। আমার অনুরোধ মাহে রমজানের মাসে নিজেদের দিকে তাকিয়ে, নিজ নিজ ভূমিকা পালন করি। আমরা যেটা করতে চাচ্ছিলাম, সেটা করতে পাচ্ছি কী না। না করতে পারলে কীভাবে আমরা প্রতিবাদ জানাব, কীভাবে কথাগুলো শোনাতে পারব, শোনাবার পথ আমরা বের করব। পথ আমাদের বের করতেই হবে। তা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক (এসআই) গুলশান আনোয়ার প্রধান।
নথি থেকে জানা গেছে, দুদকের অনুমোদিত অভিযোগপত্রে আসামি ছিল ১৩ জন। নতুন করে একজন আসামি যুক্ত হয়েছে। তিনি হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান।
অভিযোগপত্র ভুক্ত ১৪ আসামি হলেন—গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।
গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সংস্থার উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।