ডলার-সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আমদানিতে ঋণপত্র খোলার হার কমেছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। একই সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খোলার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ৫ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি খোলা কমেছে ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভোগ্যপণ্য, মধ্যবর্তী পণ্য, ক্যাপিটেল মেশিনারি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে এসময় পেট্রোলিয়ামের আমদানি ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এসময় ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয় ৫৪৯ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ক্যাপিটেল মেশিনারির জন্য এলসি খোলা হয় ২১৪ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ৪৬৬ কোটি ডলার। সেই তুলনায় ক্যাপিটেল মেশিনারির ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৫২ কোটি ডলার বা ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত কারখানার সম্প্রসারণ এবং নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করেন। এর ফলে শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। একই সঙ্গে দেশে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। নতুন বিনিয়োগ করতে না পারায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণ কমিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আলোচ্য সময়ে মধ্যবর্তী পণ্যের ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং শিল্পের কাঁচামালের ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে।
করোনার ধাক্কা সামলে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলো দেশের অর্থনীতি। এমন সময়ে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে ও ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন হয়। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কায় দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এসব অস্থিরতার মধ্যেই দেশে ব্যাপকহারে ডলার সংকট দেখা দেয়। এসময় সংকট কাটাতে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার।