আফগানিস্তানে কিছুদিন পর পর নতুন নতুন নিয়ন, নিষেধাজ্ঞার শুনতে পাওয়া যায়। এবার আরও এক নিষেধাজ্ঞার খড়গ নারীদের পোশাকে। বামিয়ান প্রদেশের দোকানগুলো থেকে নারীদের ছোট, পাতলা ও আঁটসাঁট পোশাক সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। কোনও দোকানে এ ধরনের পোশাক বিক্রি বা প্রদর্শন যাবে না।
আফগান সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বামিয়ানের নীতি ও নৈতিকতা বিভাগ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রদেশের ব্যবসায়ীরা যেন আর নারীদের পাতলা ও আঁটসাঁট পোশাক আমদানি না করেন। কারণ এগুলো ‘শরিয়া ও আফগান সংস্কৃতির’ বিরোধী।
তালেবান প্রশাসন মনে করে ছোট, আঁটসাঁট, পাতলা পোশাক পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণ। তাই জনগণকে এ ধরনের পোশাক ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নীতি ও নৈতিকতা বিভাগের প্রধান মাহমুদুল হাসান মনসুরি বলেন, ব্যবসায়ী, দোকানদার ও কারিগরদের বলেছি, আমরা মুসলিম এবং আমাদের সংস্কৃতি ইসলামী। তাই আফগান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক আমদানি করা উচিত। যেসব পোশাক ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যেমন ছোট, আঁটসাঁট ও পাতলা পোশাক- সেগুলো আমদানি করাও উচিত নয়।
কেউ এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেছে তালেবান প্রশাসন।
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার সীমিত করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালেবান। মেয়েদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা বন্ধ, নারীদের পার্ক যাওয়া, জিমে যাওয়া, রাস্তায় পর্দাবিহীন বের হওয়া নিষিদ্ধ করেছে তারা। চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বিভিন্ন অফিস-আদালতে কর্মরত নারীদের। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের সব বিউটি পার্লার। মেয়েদের বিদেশেও পড়তে যেতে দিচ্ছে না তালেবান। গোষ্ঠীটির এ ধরনের নারীবিরোধী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে অধিকার সংগঠনগুলো।
কিছুদিন আগেই আফগানিস্তানের ‘কঠোর ও নারীবিদ্বেষী’ নীতিগুলো প্রত্যাহার এবং নারীদের বাইরে কাজ করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত রিচার্ড বেনেট।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৪তম নিয়মিত অধিবেশনে বক্তৃতা করতে গিয়ে বেনেট বলেন, অন্তর্বর্তী আফগান সরকারের সাম্প্রতিক বিধিনিষেধের কারণে অন্তত ৬০ হাজার নারী চাকরি হারিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আফগান নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সম্পৃক্ততার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।