বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সাফল্যের অন্যতম অংশীদার বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৩তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৩তম জাতীয় সমাবেশ-২০২৩ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি এ বাহিনীর সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ বাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে আনসার সদস্যরা নিজেদের অস্ত্রাগারে রক্ষিত ৪০ হাজার থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ১২ জন বীর আনসার সদস্য মুজিবনগরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে এ বাহিনীকে করেছে গৌরবান্বিত। ভাষা শহীদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ৬৭০ জন বীর আনসারসহ সব শহীদকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সাফল্যের অন্যতম অংশীদার। জনসম্পৃক্ত সুশৃঙ্খল এ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিবার পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য, দুর্যোগ মোকাবিলা, পরিবেশ রক্ষা, বৃক্ষরোপণ, নারী ও শিশুপাচার রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অনবদ্য অবদান রাখছে। নারীর ক্ষমতায়ন, জনকল্যাণ ও উন্নত জাতি গঠনে এ বাহিনীর বহুমুখী উন্নয়নমূলক কর্মতৎপরতা সত্যিই প্রশংসনীয়। এছাড়াও খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে এ বাহিনীর সদস্যরা অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এ বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাহিনীর সদস্যদের জন্য নতুন পোশাক প্রবর্তন, পারিবারিক রেশন প্রদান, সাধারণ আনসারের রেশন সামগ্রীর পরিমাণ বৃদ্ধি, সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় পদক প্রবর্তন, কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন গ্রেডে নতুন পদ সৃজন, টিআইদের পদোন্নতি এবং কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ব্যাটালিয়ন সদস্যদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও একটি বিশেষায়িত গার্ড ব্যাটালিয়নসহ নতুন আনসার ব্যাটালিয়ন গঠন, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের স্থায়ীকরণের মেয়াদ হ্রাস এবং আনসার ব্যাটালিয়নের তিনটি পদবির বেতন গ্রেডের ধাপ উন্নীত করা হয়েছে। বাহিনীর অবকাঠামোসহ সবক্ষেত্রে আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে রেঞ্জ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ভবন নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো প্রয়োজনে এ বাহিনীর সদস্যরা আত্মনিবেদিত ও সদা তৎপর। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের শুরুতেই মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, মাস্ক ও লিফলেট বিতরণ করে। শ্রমিক সংকটকালে কৃষকের ফসল ঘরে তোলা, ত্রাণ বিতরণ এবং হাসপাতালে আগত রোগীদের সহায়তা করেন আনসার সদস্যরা। এছাড়াও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে নিবন্ধন কার্যক্রমে সহযোগিতা ও কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে এ বাহিনীর সদস্যদের সাহসী উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব সদস্য দেশপ্রেম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাহিনীর সুনাম, ঐতিহ্য ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবেন। তারা দেশ ও জাতির শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে আরও অবদান রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। এ সময় শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৩তম জাতীয় সমাবেশ-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত সব কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন।