৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ডলার ছাড়ের বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি মাসের শেষ নাগাদ কিংবা আগামী মাসের শুরুর দিকে এই অর্থ ছাড়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছে ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসা সংস্থাটির প্রতিনিধি দল। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুন নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ও কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা কমাতেও সম্মত হয়েছে প্রতিনিধি দল। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ এপ্রিল ঢাকা সফরে আসা আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রো ইকোনমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সুনির্দিষ্ট বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে। এসব বৈঠকের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সার্বিকভবে পর্যালোচনামূলক বৈঠকে তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আশ্বাসের পাশাপাশি ঐকমত্যের ভিত্তিতে লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ এবং সংশোধিত শর্ত সংযুক্ত করে চূড়ান্ত করা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে।
বুধবার অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানের সঙ্গে প্রতিনিধি দল সৌজন্য স্বাক্ষাৎ করবে। একই দিন সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা ছাড়বে। মিশনটির চূড়ান্ত করা সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে চলতি মাসের শেষ নাগাদ ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় পরিচালনা পর্ষদের সভায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ডিসেম্বর নাগাদ শর্ত পরিপালনের ভিত্তিতে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সময়ে নির্ধারিত পরিমাণগত ও কাঠামোগত ১০টি শর্তের মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া ৯টি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। কিন্তু রিজার্ভের উন্নতি না হওয়ায় বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়। তার পরও বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫৮ মিলিয়ন ডলার পিছিয়ে ছিল। এ শর্ত পূরণ না হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহতি চাইতে হলেও তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য তা বাধা হচ্ছে না।
দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত জুন পর্যন্ত রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। তখনও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। জুন শেষে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন। এ ছাড়া তখন রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। এর পর দ্বিতীয় কিস্তির আগে আসা মিশনকে এসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার পেছনে যৌক্তিকতা বোঝাতে সমর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় কিস্তি পায় বাংলাদেশ।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে দুই কিস্তিতে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে তৃতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় হবে চলতি মাসের শেষ নাগাদ। নভেম্বর নাগাদ সমান পরিমাণ চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুনভিত্তিক বেশ কিছু শর্ত পরিপালনের কথা রয়েছে।
শর্ত অনুযায়ী চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুন শেষে নিট রিজার্ভ ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার কথা ছিল। তবে বর্তমানে দেশে রয়েছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে মিশনকে জানানো হয়, বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে কাঙ্ক্ষিত হারে বাজেট সহায়তা পাওয়া যায়নি। আগামী জুনের আগে বিশ্বব্যাংক থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে। এর বাইরে খুব বেশি সহায়তার আশা করা যাচ্ছে না। তাছাড়া নির্বাচনের পর স্থিতিশীল পরিবেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার প্রবাহ বাড়ায় আর্থিক হিসাবের ঘাটতি কমে আসবে বলে আশা করা হলেও তা হয়নি। তাই জুন শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা ১৭ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে নামিয়ে আনার অনুরোধ জানায় সরকার। একই সঙ্গে বিনিময় হার আরও নমনীয় করতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতির জন্য শিগগির ক্রলিং পেগ সিস্টেম চালু করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ মিশন লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে। একই সঙ্গে কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা কমাতেও সম্মত হয় প্রতিনি
ধি দল।