‘আমাদের এখানে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। টাকার তো প্রয়োজন। আইএমএফের ঋণ আমরা গ্রহণ করব। তবে কঠিন শর্ত আমরা মেনে নেব না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, টাকার জন্য খুব হার্ড প্রি-কন্ডিশন মেনে নেয়া সহজ নয়। আলাপ-আলোচনা চলছে। কথাবার্তা চলছে, যেটা যৌক্তিক সেটাই হবে। এই মুহূর্তে টাকা নিতে হবে, বিকল্প নেই। অর্থ আমরা নেব, তবে কঠিন শর্তে নয়।
সচিবালয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব সংকট এখন আমাদের জাতীয় জীবনে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট, ডলার সংকটসহ রিজার্ভে চাপ পড়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। ব্রিটেনের মতো দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ১০ দশমিক ১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি।’
কাদের বলেন, ‘সেখানে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ ছিল, সর্বশেষ এটি ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, কিছুটা কমেছে। আমাদের এখানে দ্রব্যমূল্যের বাড়ার গতিটা একটু কমেছে। আশা করছি, আস্তে আস্তে স্বস্তিদায়ক হবে। শান্তি কথাটা আমরা মুখে যতটা বলি, বাস্তবে ততটাই কঠিন।
‘আমাদের এখানে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। টাকার তো প্রয়োজন। আইএমএফের ঋণ আমরা গ্রহণ করব। তবে কঠিন শর্ত আমরা মেনে নেব না। টাকার জন্য খুব হার্ড প্রি-কন্ডিশন মেনে নেয়া সহজ নয়। আলাপ-আলোচনা চলছে। কথাবার্তা চলছে, যেটা যৌক্তিক সেটাই হবে। এই মুহূর্তে টাকা নিতে হবে, বিকল্প নেই। অর্থ আমরা নেব, তবে কঠিন শর্তে নয়।’
আইএমএফের কঠিন শর্ত কী- জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘অ্যাপ্লাই ইয়োর কমনসেন্স। কঠিন শর্ত যেটা লাগবে, সেটা দিয়ে কেন? আপনি একজন সাধারণ মানুষ, আপনি বোঝেন যে শর্তটা কী? আইএমএফের অতীতের ব্যাপারও আমরা জানি। আইএমএফের শর্তগুলো কী হতে পারে, কোন শর্তটা মানলে দেশের আরও ক্ষতি হতে পারে, এমন শর্ত আমরা মানব না।
‘আমাদের অতটা সংকট নেই, যেটা বাইরের অনেক দেশে আছে। আমরা অনেকের তুলনায় ভালো আছি, ভালো বলতে আমি বলছি- স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লে সাধারণ মানুষের কষ্ট তো হবেই। সেটা আমরা সরকার হিসেবে নাকচ করে দিচ্ছি না, আমরা রিয়ালাইজ করছি। আমরা চেষ্টা করছি। সংকট একেবারে চলে যাবে এমনটা আমরা বলছি না। আমরা স্বস্তিদায়ক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, চালিয়ে যাব।’
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদানকারী সংস্থা আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চায় বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এ বিষয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। তারই অংশ হিসেবে ঋণ দেয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে আইএমএফের দক্ষিণ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ঋণের টাকা পেলে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, বাজেট সহায়তা ও জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় করা হবে।
আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সরকারের চলমান আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে শেষে হচ্ছে তাদের এই সফর।
ঋণের শর্ত নিয়ে টানা ১৫ দিন সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে দর-কষাকষির পর বুধবার একটি বিৃবতি দেয়ার কথা সফররত আইএমএফ মিশনের। সফরের আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন আইএমএফ কর্মকর্তারা।
বুধবার দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে তার দপ্তরে শেষ বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খানসহ অর্থ বিভাগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিতি থাকবেন।