দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি অদায়ে ডাকা অসহযোগ আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অগ্নিগর্ভ দেশ। বিভিন্ন স্থানে হামলা-আগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে। আন্দোলকারী-আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সারাদেশে এখন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ১, মুন্সিগঞ্জে ৪, পাবনায় ৩, রংপুরে ৩, মাগুরায় ৩, কিশোরগঞ্জে ৩, বগুড়ায় ২, কুমিল্লায় ২, সিলেটে ১, ভোলায় ১, জয়পুরহাটে ১, বরিশালে ১ ও ফেনীতে ৫ জন নিহত হয়েছেন।
ফেনী:
আন্দোলনের সমর্থনে ফেনীতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এই হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন ফেনী সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম এবং পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া এই হামালায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
মুন্সিগঞ্জ:
মুন্সিগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় আন্দোলকারী-আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুন্সিগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের বাধা দিতে যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে বাধে সংঘর্ষ। দফায় দফায় বিস্ফোরণ হয় কয়েকটি ককটেল। আগুন দেয়া হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে। পুলিশ নিয়ন্ত্রণে গেলে তারাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এছাড়াও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
পাবনা:
পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের টাউন হল সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল থেকেই পাবনা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে শহরের টাউন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র-জনতা। টাউন হল এলাকায় ঘণ্টাখানেক ধরে অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে অতর্কিত গুলির আঘাতে ৩ জন নিহত হয়। সূত্র চ্যানেল 24
রংপুর:
রংপুরে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) নগরীর সিটি করপোরেশন এলাকায় সংঘর্ষ বাধলে নিহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নগরীর গুরাতিপাড়ার যুবলীগ কর্মী খসরু, মাসুম ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী।
মাগুরা:
মাগুরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন। পুলিশ জানায়, বেলঅ ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী।
বগুড়া:
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহত একজনের নাম মুনিরুল ইসলাম। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়। অন্যজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া, সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৯ জন ভর্তি রয়েছেন।
কুমিল্লা:
কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। নিহত আব্দুর রাজ্জাক রুবেল দেবিদ্বার উপজেলার বাড়েরা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। অন্য একজনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া রাজধানী ঢাকায় ১ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, সিলেটে ১ জন, ভোলায় ১ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, বরিশালে ১ জন করে নিহত হয়েছেন সংঘর্ষে