পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রবাসী আয় বেড়েছে। চলতি জুন মাসের প্রথম ২৩ দিনে ১৭৯ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে যার পরিমাণ ১৯ হাজার ৪০৩ কোটি টাকার বেশি। প্রবাসী আয় আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে আবারও দুই বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌছাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের প্রথম ২৩ দিনে মোট ১৭৯ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত এক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৪১ কোটি ৭৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
আলাচিত সময়ে ৮টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বেসরকারি খাতের বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, কমিউনিটি ব্যাংক লিমিটেড, সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি। আর বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম এগারো মাসে (জুলাই-মে) প্রবাসীরা ১ হাজার ৯৪১ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই মাসে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এর পরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা পাঁচ মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থেমে যায়। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার বা ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার। আর জানুয়ারি মাসে আসে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার, মার্চে ২০২ কোটি ডলার, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি ডলার এবং মে মাসে ১৬৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা।
ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ। তবে সামনে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা রয়েছে। চলতি জুন মাসের প্রথম ২৩ দিনে ১৭৯ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে আবারও দুই বিলিয়ন ডলার ঘরে পৌছাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
এছাড়া গত ৩১ মে রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয়ে ফের ডলারের দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা। এর ফলে এখন প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে দাম পাবেন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। আর রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পাবেন ১০৭ টাকা। এর আগে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ছিল ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি আয়ে ছিল ১০৬ টাকা।
গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এ অবস্থা তৈরি হয়। সংকট মোকাবেলায় শুরুতে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতো বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এতে সংকট কমার পরিবর্তে আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকে এ দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।