দেশের সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমানের নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা এবং সেনাপ্রধান হিসেবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবৈধভাবে বিএনপি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া হয়েছিলো বলে মনে হয়। জাতির পিতা নিজের জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন এদেশের মানুষের জন্য। সেই ৫৩ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদ দিয়ে শুরু, এরপর ধাপে ধাপে মুক্তিযুদ্ধের ডাক। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বিশ্বে যে সম্মান হয়েছিল, ১৫ আগস্টের মাধ্যমে তা ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়া জড়িত না থাকলে মোশতাক কখনো এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়া যে জড়িত তা প্রমাণিত সত্য। সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘল করে একাধারে সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। আর ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট অর্থাৎ ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা জিয়া-ই শুরু করেছিল। অবৈধভাবে যে ক্ষমতায় দখল করেছিল, সেটি বৈধতা দেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমান ভোট কারচুপির মাধ্যমে...জিয়াউর রহমান ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু লোক এনে এবং চাপ সৃষ্টি করে কিছু লোক এনে অবৈধভাবে দল গঠন করে। বিএনপি একটি অবৈধ দল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার-সদস্যদের হত্যা করে। বিমান বাহিনীর শত শত অফিসারদের হত্যা করেছে। হত্যা করে লাশ কারও কাছে দেয়নি, গুম করে ফেলেছিল জিয়াউর রহমান। এখনও তাদের পরিবার তার লাশ খুঁজে ফেরে, কোথায় তাদের কবর।
‘তবে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যেভাবে জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, সেও কিন্তু খুন হয়। তার লাশের কিন্তু কোনও খবর নেই। সংসদ ভবনে যে কবর দেওয়া হয়েছে, সেখানে জিয়ার কোনও লাশ নেই। জেনারেল এরশাদ সেই কথা কিন্তু বলে গেছে। সে বলেছে, জিয়ার লাশ পাওয়া যায়নি। জিয়ার লাশ খালেদা বা তারেক বা কোকো বা পরিবার-পরিজন কেউ দেখে নাই। তাহলে লাশ গেলো কোথায়।’
তিনি বলেন, এরশাদ ধূর্ত লোক ছিল বলে একটি বাক্স এনে লোককে দেখানোর জন্য সংসদ ভবনে একটি অবৈধ স্থাপনায় কবর দিয়েছে। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মী ফুল দেয়। কিন্তু কাকে ফুল দিচ্ছে সেটা কি তারা জানে? জানে না।
খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি জন্মদিনে ১৫ আগস্ট হিসেবে তার জন্মদিনের উল্লেখ নেই, সেই বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা মানুষ কতটা অমানবিক হলে একটা শোক দিবসকে জন্মদিন বানিয়ে দিয়ে সেই উৎসব পালন করতে পারে একটু চিন্তা করে দেখবেন। কতটা অমানবিক। আমাদের অনেকেরই ১৫ আগস্ট জন্মদিন কেউ তো পালন করে না। খালেদা জিয়া পালন করে। হঠাৎ করেই জানলাম তার জন্মদিন ১৫ আগস্ট। মানুষ এদিন শোক পালন করে আর তারা বানানো জন্মদিন পালন করে। কতটা অমানবিক।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়ার হাতে আমাদের শত শত নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছে। অনেককে হত্যা করেছে, অনেককে গুম করেছে। ঠিক খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে একই ঘটনা। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এতে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছিল, তা ভাবলে এখনও শিহরিত হতে হয়। কত নেতাকর্মী দিনের পর দিন কারাবরণ করতে হয়েছে। অনেককে ধরে নিয়ে কোথায় নিয়ে গেছে কেউ বলতে পারে না। যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে এদেশে হত্যা-খুন-গুম, এটাই জনগণের ভাগ্যে ঘটেছে। জনগণের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান এসে তাদের মুক্ত করে। আলবদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে নিয়ে এসে ক্ষমতায় বসায়। এরা তো এদেশের স্বাধীনতাই চায়নি। এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিই চায়নি। একুশটা বছর এদেশের মানুষের কোনও ভবিষ্যৎ ছিল না। একটা অন্ধকার যুগে নিয়ে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। এরপর খালেদা জিয়া তো আরও একধাপ এগিয়ে সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাদেক খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন, সাজেদা বেগম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি প্রমুখ।
এ ছাড়া আলোচনা আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন, গোলাম সারোয়ার কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মাজহার আনাম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন্নেসা মেরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মোরশেদ কামাল প্রমুখ।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।