২০২০ সালের জুন প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী এমকে ফুটওয়্যার পিএলসির লোকসান ছিলো ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এক বছর পর অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন প্রান্তিকে মুনাফা করে এক কোটি ৮ লাখ টাকা।
আর ২০২২ সালের জুনে কোম্পানির মুনাফা দাঁড়ায় ১০ কোটি ৩০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৯ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বা ৮৫৫ শতাংশ। এই মুনাফাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
এমন অস্বাভাবিক মুনাফা দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ১০ কোটি টাকা তুলতে চায় কোম্পানিটি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) কোম্পানিটিকে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে এই অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদন অনুয়ায়ী আগামী ১১ জুন থেকে কোম্পানিটির কিউআইও আবেদন শুরু হবে।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে আসার আগে কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক সম্পদ, বিক্রি, মুনাফাসহ নানা ইস্যু বেশি দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে ৯ কোটি টাকার বেশি মুনাফা দেখানো কোনোভাবেই শুভ লক্ষণ নয়। এই কোম্পানিতে যারা বিনিয়োগ করবেন তারা নিশ্চিত ঝুঁকিতে পড়বেন।
জানা গেছে, এসএমই খাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে এমকে ফুটওয়্যারকে ১০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটি ১ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করবে। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে কিউআইওর মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ইস্যু করা হবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, উত্তোলন করা পুরো ১০ কোটি টাকা দিয়ে কোম্পানিটি মেশিনারিজ কিনে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াবে।
তবে সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানিটি সক্ষমতার ৭৬ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে। বাকি ২৪ শতাংশ ব্যবহার করতে পারেনি। বিদ্যমান সক্ষমতার শতভাগ ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েও উৎপাদন সক্ষমতার দোহায় দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনকে সহজভাবে দেখতে নারাজ বিনিয়োগকারীরা।
প্রস্পেক্টাস অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন প্রান্তিকে কোম্পানির কোনো টার্নওভার নেই। ২০২১ সালের জুনে এসে টার্নওভার হয় ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ব্যয় শেষে নিট মুনাফা হয় এক কোটি ৮ লাখ টাকা। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিক্রি থেকে সব ব্যয় বাদ দিয়ে নিট মুনাফা করে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এ হিসেবে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি বেড়েছে ৮৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বা ১৯১ শতাংশ।
উৎপাদনে আসার মাত্র দুই বছরেই টার্নওভারের এই তথ্যও অস্বাভাবিক বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
কোম্পানিটির ২০২১ সালের ১ জুলাই হতে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়কালের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী ডাইলুটেড শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৩ টাকা ১৯ পয়সা। শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) পুনঃমূল্যায়ন ছাড়া ১২ টাকা ৯৫ পয়সা। তার আগের বছরে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিলো ১০ টাকা ২৭ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এনএভি বেড়েছে ২ টাকা ৬৮ পয়সা।
কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনা ও আন্ডার রাইটার হিসেবে আছে আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিতি এমকে ফুটওয়্যারের পরিশোধিত মূলধন শুরুতে ছিলো মাত্র এক কোটি টাকা। কিন্তু শেয়ারবাজারে আসার জন্য বিএসইসিতে আবেদনের আগে কোম্পানি পরিশোধ মূলধন একলাফে ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। পরিশোধিত মূলধনের এই তথ্যও বিনিয়োগকারীদের শঙ্কিত করছে।