এপ্রিল ১৯, ২০২৪

মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন

কলকাতা প্রতিনিধি

নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে ভারতের পুঁজিবাজারের সেনসেক্স ইনডেক্স। অথচ দীর্ঘ ১২ বছর পরও বাংলাদেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইক্স সূচক ৮৯১৮ পৌঁছে যায়। তার পরই শুরু ভয়াবহ পতন। টানা পতনে নিঃস্ব হতে থাকেন পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সেই দিনের পর থেকে দীর্ঘ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ডিএসই সূচক ছুঁতে পারেনি ৮৯১৮ পয়েন্ট।

একই সময়ে সেনসেক্স ইনডেক্স অবস্থান করছিলো ২০ হাজারেরও নিচে। ১২ বছর পর আজ তা ৬২ হাজার ২৯৩ সূচকে অবস্থান করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে সেনসেক্সে ইনডেক্স।

বিশ্বের অনেক দেশকে পিছনে ফেলে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে দেশটির অর্থনীতির। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আইটি সেক্টরে , যোগাযোগ ব্যবস্থা , পোশাক খাতে , গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন , আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সুশাসন নিশ্চিতে সফলতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯-এর বৈশ্বিক মহামারী সংকটে বাংলাদেশের জনগণকে ঝুঁকিমুক্ত রেখে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে তার সফল নেতৃর্ত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয়।

এতো উন্নয়নের মধ্যেও পুঁজিবাজারের এই বেহাল দশাকে অনেকেই এক মণ দুধে এক ফোঁটা চোনা’ র প্রবাদের সাথে তুলনা করছেন।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বেহাল দশার পিছনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মুনাফার প্রবণতা , এবং বার বার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত সম্পদকে লুন্ঠনের প্রবণতাকেই দুষছেন অনেকেই । দেশটির পুঁজিবাজারের পতন রোধে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ফ্লোর প্রাইস ( পতন সীমা ) বেঁধে দেওয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে উদ্দেশ্যমূলক প্রচার প্রচারণার অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে ।

ফ্লোর প্রাইস কেন তুলে দিতে চায় : বিভিন্ন মহলের তথ্য মতে ইউক্রেন – রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হতেই শ্রীলংকার অর্থনীতি ভেঙে পরে। সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে একটি মহল গুজব তুলে বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলংকার মতো ধসে পরবে। সেই গুজবকে ত্বরান্বিত করতে পুঁজিবাজারে বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেয় একটি চক্র। শুধু তাই নয় শেয়ার বিক্রি করে ডলার কিনে রাখার অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। চক্রটির উদ্দেশ্য ফ্লোর প্রাইস তুলে পুঁজিবাজারে নতুন করে ইচ্ছেকৃত বিক্রির চাপ বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব , সর্বস্বান্ত করে শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার। একেক সময় একেক রকম ফন্দি এঁটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই যেন মুষ্টিমেয় শ্রেণীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দুর্বলতা : প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মূলত পুঁজিবাজারের মূল চালিকা শক্তি। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থ আইপিও , বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনীতিতে পুঁজির যোগান দিয়ে গতিশীল করবে। তাদের এই অর্থ কোন চক্র যেন কারসাজি করে লুট করে নিতে না পারে সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সর্বদা সজাগ ভূমিকা রাখবে। সেকেন্ডারি মার্কেটে অতিরিক্ত ওঠা নামা , অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক ভূমিকা রাখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারে সাপ্লাই , ডিমান্ড নিয়ন্ত্রণে অপরিসীম ভূমিকা রাখতে হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে মুনাফা অর্জনই কোন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নয়। অথচ দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর ঘেটে মনে হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো স্বল্প সময়ে মুনাফা করার প্রবণতায় আসক্ত। শুধু তাই নয় বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ধতন কর্মকর্তারাও কারসাজি চক্রের যোগসাজশে সাধারণ মানুষের অর্থ লুটের উৎসবে মেতে উঠেন পরে। অনেকটা রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় উপনীত হয়ে যায়।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থারই নেই নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণ করবে কে ? প্রশ্ন উঠলেই সবার আগে আসবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নাম। অথচ এই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এতটাই দুর্নীতিগ্রস্থ তাদের এমডিরা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পালিয়ে যাচ্ছে । রন্দে রন্দে তাদের এতটাই দুর্নীতি সাধারণ কর্মচারীদের থেকে শুরু করে এক্সচেঞ্জেরটির ডিরেক্টররাও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। দুর্নীতিতে সায় না দেওয়ায় দুজন এমডির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই পদত্যাগের পরও টনক যেন নড়ছেই না ঊর্ধ্বতন মহলের। এখনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়াই চলছে এই স্টক এক্সচেঞ্জ। কারসাজিতে সায় না দেওয়ায় একটি দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জের ঘন ঘন এমডিদের পদত্যাগ বিশ্বে নজিরবিহীন।

মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন

বিনিয়োগকারীদের নজিরবিহীন প্রতিবাদ : ধারাবাহিক পতনে প্রায়ই রাজপথে নেমে এসে প্রতিবাদ করেন বিনিয়োগকারীরা। দুর্বল কোম্পানি লিস্টিং , অতিরিক্ত রাইট বোনাস শেয়ার ইস্যুর বিরুদ্ধে যোক্তিক প্রতিবাদ তুলে ধরেন তারা। তারপরও অভিযোগ উঠে মানহীন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে লিস্টিং।

ধারাবাহিক পতনের প্রতিবাদের আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীরা

তাদের পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে উঠে আসে করুন চিত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিনিয়োগকারী বলেন ‘ এখানে বিনিয়োগ করে আমরা কি পেলাম ? যারা আমাদের পুঁজির নিরাপত্তার দায়িত্বে তারাই আমাদের পুঁজি লুট করতে উঠে পরে লাগে । একটি মহল ফ্লোর প্রাইস তুলে আমাদের আবারো লুটতে চাচ্ছে। বিভিন্ন সময় আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান করে সর্বশান্ত করা হয়েছে। আমরা তো যা হারানোর তা হারিয়েছি , সরকারের যে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে তাতেও কি সরকার  প্রদক্ষেপ নিবেন না ? কে শুনবেন আমাদের আর্তনাদ ? ‘ তিনি আরো বলেন ‘ আমরা দাবি করি , সরকার যেন বিশেষ ফান্ড গঠন করে পুঁজিবারে বিনিয়োগের দ্বারা এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন।’

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের করুন চিত্রকে অনেকেই ‘ গভীর গহ্বরে সূর্যের হারিয়ে যাওয়া ‘র সাথে তুলনা করেন। শত চেষ্টা করেও যেন সূর্যের আলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

সোনালি চক্রবর্তী

বাঁকুড়া  , পশ্চিমবঙ্গ 

সূত্র – https://www.dsebd.org/

https://www.sec.gov.bd/

Social Media , Newspapers

Indian shares settle at new highs; extend rally for fourth day | Reuters

 

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *