এপ্রিল ১৯, ২০২৪

ঢাকায় শেষ হলো বিশ্বের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) দুই দিনের প্ল্যানারি সভা। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরাটন হোটেলে শেষ দিনের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এপিআরসির সভা শুরু হয়।

আইওএসকো’র এপিআরসি’র চেয়ার সেগুরু আরিজুমি সভাটি উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) এবং আইওএসকো’র এপিআরসি’র ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হোটেল শেরাটনে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নেপালসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের উধতন কর্মকর্তাসহ তাদের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উক্ত সভায় সারা বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান আইওএসকোর সচিবালয়, স্পেনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় এপিআরসির সম্মানিত চেয়ার সেগুরু আরিজুমি এবং ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সভার আলোচ্যসূচির অনুমোদন প্রদান করেন।

সভায় আইওএসকোর সচিবালয় এর উপ-মহাসচিব সভার আলোচনার সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর হালনাগাদ তথ্য প্রদান করেন। এছাড়া সভায় অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আগের দিনের অনুষ্ঠিত সুপারভাইজরি ডিরেক্টর মিটিং এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর মিটিংয়ের আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।

পরবর্তীতে আর্থিক প্রযুক্তি, পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ মূলক সহযোগিতা বৃদ্ধি, টেকসই আখথিক সংস্থান, বাজার বিভাজন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ সমূহের আঞ্চলিক আখিক সংস্থান, নিয়ন্ত্রক প্রযুক্তিসহ অন্যান্য অনেক বিষয়ে বাংলাদেশ, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড সহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিগণ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন এবং নিজ নিজ দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নতিতে এই সভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি বাংলাদেশে আসার জন্য আগত অতিথিদের আবারো আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এছাড়াও এদিন আইওএসকো’র এপিআরসি’র সভা ২০২৩ এর সমাপনী অনুষ্ঠান ও গালা ডিনার অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং আইওএসকো’র এপিআরসি’র ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অথ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ | অনুষ্ঠানটিতে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইওএসকো বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও এপিআরসির চেয়ার সেগুরু আরিজুমি এবং আইওএসকোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল তাজিনডার সিং। সমাপনী অনুষ্ঠানে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অতিথিদের সম্মানিত করা হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিএসইসি ও সরকারের পক্ষ থেকে এপিআরসির সভা আয়োজনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আইওএসকোকে ধন্যবাদ জানান। তিনি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সংগ্রামের কথা ও বাংলাদেশের কঠিন সময়ে পাশে থাকা মিত্রদের কথা স্মরণ করেন এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঠিক বঙ্গবন্ধু যেমনটি বলেছেন ঠিক তেমনই সোনার বাংলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও প্রগতিশীল নেতৃত্বে এদেশ এগিয়ে চলেছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিদের সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে আবারও বাংলাদেশে আসার অনুরোধ জানান।

গেস্টস অব অনারে বক্তব্যে আইওএসকোর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও এপিআরসির চেয়ার সেগুরু আরিজুমি আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশ ও জাপানের অত্যন্ত বিস্তৃত ও দীর্ঘ মেয়াদী অংশীদারিত্বের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন এবং জাপান ও বাংলাদেশের পতাকার সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বিগত বছর জাপান ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপনের কথা স্মরণ করেন। বিশ্বের অথনীতির অত্যন্ত সংকটের এই সময়ে বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজ করছে বলে তিনি জানান। এপিআরসির মতো সভার মাধ্যমে এর সদস্যদের মাঝে এক থেকে অন্যদের শেখার ও বোঝার অসাধারণ সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি নিখুত আয়োজনের জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে ধন্যবাদ জানান।

এরপর গেস্টস অব অনারের বক্তব্যে আইওএসকোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল তাজিনডার সিং অনুষ্ঠানের সকলকে আতস্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি পৃথিবীর ছোট-বড় অসংখ্য পুঁজিবাজার নিয়ে গঠিত আইওএসকোর বৈচিত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, আইওএসকো অনেক রংয়ে ভরা এক ক্যানভাস। এখানে বহু দেশ একত্রিত হয়ে মিথক্ক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করছে। বিশ্বের প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ পুঁজিবাজার আমাদের অন্তর্ভুক্ত। আমরা পুরো বিশ্ব জুড়েই কাজ করি এবং আমাদের তৈরি করে দেয়া মানদণ্ড বিশ্বজুড়ে অনুসরণ করা হয়। আইওএসকো বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, বাজারের বিশুদ্ধতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা- এই তিনিটি লক্ষ্য নিয়ে জনস্বার্থে কাজ করছে বলে তিনি জানান। তিনি বাংলাদেশের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং বিএসইসি ও তার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে ধন্যবাদ জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অথ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, এপিআরসির মতো সভা আয়োজনের সুযোগ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। বিএসইসি অতীতে অনেক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান সফলতার সাথে আয়োজন করেছে। আগামীতে আরো নিয়মিত বিরতিতে এধরনের আয়োজন হোক । তিনি এপিআরসির সভায় আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ের আলোকপাত করেন এবং পুঁজিবাজারের সাথে আলোচিত বিষয়গুলোর প্রাসঙ্গিকতার প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বাংলাদেশ-জাপানের বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার ঠিক পর থেকেই জাপান বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে। তিনি নিজের প্রথম বিদেশ ভ্রমণে জাপান সফরের কথা স্মরণ করেন এবং জাপানের মানুষের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন।

তিনি শ্রদ্ধার সাথে ভাষা শহীদের স্মরণ করে বলেন, বাঙালী জাতি ভাষার অধিকার নিশ্চিতে জীবন দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার হত্যার মাধ্যমে দেশকে বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার আদর্শে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং আগামীতে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

তিনি বিএসইসি”র সাম্প্রতিক শরীয়াহ্‌ ভিত্তিক ইনসট্রুমেন্ট ও বন্ড আনয়নের প্রশংসা করেন এবং পুঁজিবাজারই সন্দেহাতীতভাবে দীঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্র বলে মন্তব্য করেন। তিনি আইওএসকোর এপিআরসির ভাইস চেয়ার নির্বাচিত হওয়ায় অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে অভিনন্দন জানান।

আইওএসকোর এপিআরসির সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের বাংলাদেশের সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য বিএসইসি’র উদ্যোগে সাইটসিইংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মত আইওএসকোর এপিআরসির সভা আয়োজনের মাধ্যমে দেশ ও দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরো পরিচিতি পাবে। একইসাথে এদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও আস্থা বাড়াবে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার এর নীতিনির্ধরণে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে, সংশ্লিষ্ট আইন কানুনের সাথে সমন্বয় করে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধি সহ দেশের পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরাষ্বিত হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *